ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

লক্ষ্মীপ্যাঁচার মিষ্টি হাসি!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
লক্ষ্মীপ্যাঁচার মিষ্টি হাসি! ছবি : সাত্তার সরকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : লক্ষ্মীপ্যাঁচার হাসি দেখেছেন কখনো? শুধু হাসি নয়; প্রাণোচ্ছ্বল বাহারি হাসি! উত্তর যদি ‘না সূচক’ হয় - তবে ভালো করে দেখে নিন লক্ষ্মীপ্যাঁচার উচ্ছ্বাসিত এ হাসি! পরম আনন্দে ঠোঁট উঁচু করে কেমন তাক লাগানো হাসি হাসছে সে। এরূপ হাসি জানান দিচ্ছে- লক্ষ্মীপ্যাঁচারা মোটামুটি ভালো আছে।


 
তবে আমাদের চারপাশের প্রকৃতি আজ ভালো নেই। প্রতিনিয়তই উজাড় হচ্ছে বন-পাহাড়। কাটা হচ্ছে ছোট-বড় নানা গাছপালা। প্রকৃতির প্রাণ গাছপালা অবলীলায় কেটে ধ্বংস করা অর্থই প্রাকৃতিক বিপদে দ্রুতই আহ্বান জানানো।  
 
যা ঘোর অমঙ্গলের। মানুষ, প্রকৃতি ও পশুপাখির জন্য। লক্ষ্মীপ্যাঁচার সেই উচ্ছ্বসিত হাসিতে ফুটে উঠছে তাদের অস্তিত্বের নিজস্ব বার্তা। কেমন আছে লক্ষ্মীপ্যাঁচারা? এ প্রশ্নটি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খানের কাছে।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, লক্ষ্মীপ্যাঁচার ইংরেজি নাম Common Barn Owl। ঢাকা শহরেই প্রায় এক-দেড় হাজার লক্ষ্মীপ্যাঁচা রয়েছে। গ্রামে এদের কম দেখা গেলেও শহরে বেশি দেখা যাচ্ছে। এর কারণ গ্রাম থেকে শহরে খাবারের সুযোগ-সুবিধা বেশি। এদের মূল খাবার ইঁদুর।  
 
লক্ষ্মীপ্যাঁচার অবস্থান সম্পর্কে বলেন, এরা পুরনো ঘরবাড়ি বা দালানকোঠার কোণা অথবা বড় গাছের কোটরে (গর্ত) বসবাস করে। পুরাতন বাড়ি বা বড় গাছ তো আর এখন দেখা যায় না। তাই তারা বাধ্য হয়ে শহরের বড় বড় বিল্ডিংয়ের কোণা, সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড অথবা এসি মেশিনের পেছনে লুকিয়ে থাকে। ঢাকা শহরের এদের খাবার আর আত্মগোপনের জায়গা ভালো আছে বলে এরা মোটামুটি ভালোভাবেই টিকে আছে।  
 
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শরীফ খান বলেন, ঢাকা শহরের মতিঝিল-পল্টন এলাকায় প্রচুর লক্ষ্মীপ্যাঁচা আমি দেখেছি। এরা নিশাচর প্রাণী। তাই সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে ওরা লুকানো আশ্রয় থেকে বের হয়। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের আশপাশে রাত আটটা-নয়টায় গেলে এদের দেখা যাবে। শাপলা ভাস্কর্যের পাপড়িতে মাঝে মাঝে এসে এরা বসে। ঢাকা শহরের অধিক পরিমাণে খাবার হোটেল থাকার ফলে ইঁদুরও রয়েছে প্রচুর।
 
আমি আগে মুগদাপাড়ার যে বাসাটিতে থাকতাম যেখানের একটি ভেন্টিলেটারে এক লক্ষ্মীপ্যাঁচা দম্পতি পর পর সাতবার ছানা ফুটিয়েছিল। এদের স্বভাবই হচ্ছে এরা গর্তের ভেতরে লুকিয়ে থাকে। দিনে এদের দেখা পাওয়া কঠিন।   
 
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপ্যাঁচার আকার অনেকটা কবুতরের মতো। ৩৬ সেমি। হালকা সোনালি পিঠ এবং সাদাটে পেট। তাদের সাদা পানপাতার মতো মুখমণ্ডল। এরা সাপের মতো হিস হিস শব্দ করে ডাকে।
 
পাখি আলোকচিত্রী সাত্তার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার থেকে এই দুটি ছবি তুলেছি। ওই বাসায় মোট পাঁচটি ছানা এবং দু’টি প্রাপ্তবয়স্ক মা-বাবা অবস্থান করছিল। লক্ষ্মীপ্যাঁচার এমন হৃদয়কাড়া হাসি আমি আগে কখনো দেখিনি! 
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।