ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

টবের দুধলিয়ায় ঘুঘুর বাসা

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
টবের দুধলিয়ায় ঘুঘুর বাসা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ। বারান্দাটি সাজানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছে।

এরমধ্যে একটি দুধলিয়া। পাতাহীন সবুজ নরম ডাল-পালার গাছ। উঁচু ঝোপ‍ালো গাছে বাসা বাঁধতে অভ্যস্ত এক ঘুঘু দম্পতির কাছে অতিপ্রিয় এ টবের দুধলিয়া। বিগত আড়াই বছর ধরে এটিই তাদের ঘর-সংসার। ডিম পেড়ে বাচ্চাও ফুটিয়েছে তারা।

কিন্তু সংসার তাদের সুখের হতে দেয়নি কলেজ ক্যাম্পাসের কিছু দুষ্টু প্রকৃতির শিক্ষার্থী। তাই জায়গা পরিবর্তন করে আরও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে এ ঘুঘু দম্পতি। দুধলিয়া ছেড়ে এবছর বসন্তে বাসা বেঁধেছে বিভাগের ভাঙা ভেন্টিলেটরে। ডিমও দিয়েছে দু’টি। অফিস সহকারীর বক্তব্য, বর্ষায় ঠিকই দুধলিয়া গাছেই ফিরবে তারা।

বন-বাদাড়ে বিচরণ করা ঘুঘু পাখির কাছ থেকে এ আচরণ সত্যি অদ্ভুত। আরও অবাক বিষয়, ক্যাম্পাসের অনেক গাছ ও বিভাগ উপেক্ষা করে ঠিক উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগেই আস্তানা গাঁড়ে পাখিজোড়া। হয়তো নিরাপত্তা বেশি পাবে ভেবেই! কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। বারান্দার দুধলিয়া গাছের বাসা থেকে ডিম ও বাচ্চা চুরি যায় দু’বার। তবু এলাকা ছাড়েনি। এবার বাসা বেঁধেছে পার্শ্ববর্তী ভেন্টিলেটরে।

বন ছেড়ে মানুষ্য বিচরণ ক্ষেত্রে এসে ঘুঘু পাখির বাসা বাধার এ বিরল দৃশ্য দেখে মুগ্ধ সবাই। যদিও পাখির প্রতি ভালোবাসাহীন কিছু মানুষের অত্যাচারে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে ঘুঘু দু’টি। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমে নিজ বাসায় (দুধলিয়া গাছ) ফিরবে- এমন প্রত্যাশা উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ সংশ্লিষ্টদের।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অফিস সহকারী আব্দুস সবুর বাংলানিউজকে বলেন, পাখি দু’টি আড়াই বছর আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরাই যেন তাদের আপনজন। কিন্তু প্রথমে যখন ডিম দিয়েছিল, আমরা সার্বক্ষণিক দেখে রাখলেও ডিম দু’টি চুরি হয়ে যায়। এরপর আবার ডিম দেয়, বাচ্চাও হয়। কিন্তু আমরা রক্ষা করতে পারিনি। আবারও চুরি হয়ে যায়। পরে পাখি দু’টি একই ভবনের টয়লেটের ছাদে বাসা বাঁধে। সেখানে কিছুদিন ছিলো। এরপর আবার দুধলিয়ায় ফিরে আসে।

তিনি আরও বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে-মেয়ে তাদের বিরক্ত করলে তারা এবার ভেন্টিলেটরে গিয়ে বাসা বেঁধেছে। এখন ডিমও দিয়েছে সেখানে। তবে যে কয়বারই স্থান পরিবর্তন করুক না কেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে দুধলিয়ায় ফিরে আসে তারা। একই বাসায় নতুন করে খড়-কুটা তুলে থাকার উপযুক্ত করে নেয়।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, বন ছেড়ে বারান্দার টবে লাগানো গাছে ঘুঘুর বাসা বাধার এ দৃশ্যটি বিরল। এটা আমাদের জন্য প্রকৃতির উপহার। এতো সুন্দর একটি উপহার আমরা রক্ষা করতে পারলাম না।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দুধলিয়া ইউফোরবিসিএ গোত্রের একটি উদ্ভিদ। অনেকে একে দুধলতাও বলে থাকে। আমরা ঘুঘু দু’টিকে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। ঘুঘু দু’টি দুধলিয়াকে পছন্দ করে তাতে বাসা বেঁধে আমাদের সাথে থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু মানুষ্য সৃষ্ট সমস্যার কারণে তারা স্থান পরিবর্তন করেছে।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ওলিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন-গাছ-গাছালি ছেড়ে মানুষ্য বিচরণের মধ্যে এসে ঘুঘু পাখির বাসা বাঁধার ঘটনাটি বিরল। ঘুঘু সাধারণত বড় গাছে, যেখানে পাতা বেশি, একটু ঝোপের মতো সেখানে বাসা বাঁধে।

দুধলিয়ায় বাসা বাঁধার ঘটনাটিকে তিনি ব্যতিক্রমী উল্লেখ করে বলেন, এর পিছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন- গাছ-গাছালি কমে আবাসস্থল সংকট, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। এসব কারণে দুধলিয়ার ওই জায়গাটি হয়তো তাদের বেশি পছন্দ ও অনুকূল মনে হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।