ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

প্রাণীকুলের জন্য মরণফাঁদ ঢাকার ৪ নদীর পানি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৬
প্রাণীকুলের জন্য মরণফাঁদ ঢাকার ৪ নদীর পানি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর চারদিকে বেষ্টিত নদীগুলোর দূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায়। প্রাণীকুলের জন্য ঢাকার চারদিকের চার নদীর পানি তাই মরণ ফাঁদ বলে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।


 
সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যে নেমে গেছে। তাই এ চার নদীর পানিতে মাছসহ জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
 
সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) কলাবাগান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
 
পবার একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ঢাকার চারপাশের চার নদীর পানি নিয়ে গবেষণা করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

এ চার নদীর পানি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর প্রায় অধিকাংশ স্থানের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যে নেমে গেছে।
 
গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্য দিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবনাক্ত পানি উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী দূষণমুক্ত ও পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি করা না গেলে এবং বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে পানির অভাবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এখনই সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন নেই বললেই চলে। ফলে মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ নদীগুলো  আজ মৃত প্রায়। ঢাকা মহানগরী ও আশেপাশের টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জ এলাকার পয়ঃবর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্য, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের কঠিন বর্জ্য, হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারিসমূহের বর্জ্য, শিল্পকারখানার বর্জ্য বিশেষ করে টেক্সটাইল ডায়িং কারখানা, নৌযান নির্মাণ, মেরামত ও রংকরণ, নৌযান থেকে নির্গত তেল এবং নৌযানের বর্জ্য- এসব নদী দূষণের অন্যতম কারণ।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে পয়ঃবর্জ্যের পরিমান ১৪ লাখ ঘনমিটার। ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পাগলা পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের মাধ্যমে যার মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন করা হচ্ছে। বাকি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদীর পানির গুণগত মানের অবনতি; মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি; শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার অনুপযোগী; জীবানুজনিত দূষণ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া হাজারীবাগের ট্যানারিসমূহ থেকে দৈনিক ২২ হাজার কিউবিক মিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি। ট্যানারি থেকে নির্গত বিষাক্ত তরল ও কঠিন বর্জ্য শুধু বুড়িগঙ্গার পানিকেই দূষিত করছে না, নদীর তলদেশ ও উভয় পাড়ের মাটি এমনকি বাতাসকেও ভয়াবহভাবে দূষিত করছে।
 
টেক্সটাইল কারখানার বর্জ্যসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য নদীতে পড়ছে। অনেক শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই, আবার যেসব শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধনাগার রয়েছে সেসব শিল্পকারখানা তা পরিচালনা করে না। ফলে শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, অধিদফতর কর্তৃক পরীক্ষিত ১৩টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর পানির মান খুব খারাপ এবং শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে কোনো প্রাণী বাঁচতে পারবে না। অথচ শিল্পকারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরেরই।

নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন; গৃহস্থালি বর্জ্য পানিপ্রবাহে ফেলা থেকে বিরত থাকা; ট্যানারিগুলো জরুরিভিত্তিতে স্থানান্তর এবং বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন ও বর্জ্য পরিশোধন করা; শিল্পকারখানায় বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন এবং নিয়মিত তা পরিচালনা করা; নৌযানের ডিজাইনে বর্জ্য সংরক্ষণ বা ধারণ করার স্থায়ী কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন- পবা সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পবার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, পল্লীমা গ্রিনের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৬
এসএম/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।