ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

দাদমর্দনের পৌষ্পিক ঐশ্বর্য

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
দাদমর্দনের পৌষ্পিক ঐশ্বর্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : অজানা বৃক্ষ-লতাগুল্ম, ফুল বা পাখি দেখা আমাদের অনেকেরই প্রিয় শখ। এই ‘শখ’ এর টানেই আমরা হয়তো ছুটে বেড়াই এদিক-ওদিক।

লোকালয় থেকে জনপদ। শহর থেকে গ্রাম। নতুন ফুল চোখে পড়লেই আমরা ক্যামেরা বন্দি করি। খোঁজখবর বা নেই-এগুলো সম্পর্কে।
 
তেমনি এক অদেখা ফুল দাদমর্দন। শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার মহাসড়কের একপাশে অবস্থিত নীল আকাশ নার্সারিতে গিয়ে এই গাছটির প্রথম দেখা পাই গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে। তখন অবশ্য ফুল আসেনি গাছে। এর পত্রসৌন্দর্যও চোখে পড়ার মতো।   
 
সম্প্রতি ভূনবীর ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামের গিয়ে এর ফুলসমেত গাছটি দেখলাম। নাট্যকার ও অর্গানিক ফলস উৎপাদক কাজী শাহিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে এই ফুলটির প্রস্ফুটিত সৌন্দর্য দেখে ভীষণ অভিভূত হলাম! এর পৌষ্পিক ঐশ্বর্য উপভোগ করতে করতে ফুলগুলো যেন আমাকে কিছুক্ষণ ঠাঁয় দাঁড় করিয়ে রেখেছিল!
 
তবে, নীল আকাশ নার্সারির সহকারী পরিচালক আজিজুল ইসলাম আজিজ ফুলটি সঠিক নাম বলতে পারেননি। তিনি দায়সারাভাবে ‘দাউদ গাছ’ বলেই খালাস। কিন্তু উনার মুখে শোনা এ অদ্ভুত নামটি বড় বিষ্ময় ঠেকেছিল। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না ‘দাউদ’ নামটি নিয়ে।
 
লেখক ও গবেষক নিসর্গবিদ মোকারম হোসেনের সঙ্গে পরবর্তীতে কথা বলে এবং তাঁকে ফুলটি ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত হলাম হলুদময় সুদৃশ্য এই ফুলটির নাম ‘দাদমর্দন’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Senna alata, Syn-Cassia alata.
 
তবে, কাজী শাহিদুল ইসলাম তার উঠোনে হলুদ আলোর রঙ ছড়ানো এ ফুলটির সঠিক নাম বলতে পেলেছিলেন ঠিকই। তিনি আরও বলেছিলেন, তিনি নিজেও এর পাতা ঘসে ফোঁড়াস্থানে লাগিয়ে নাকি উপকার পেয়েছিলেন।
 
এ গাছের নামটির মাঝেই যেন চর্মরোগের যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে! কারণ আমরা জানি যে – দাদ মানেই চামড়ার ফোঁড়, বিস্ফোরণ, প্রতিঘাত ইত্যাদি। কিন্তু এর পুষ্পিত সৌন্দর্য মনকে আকুল করে তোলে। প্রথম দর্শনেই অপরূপ এ ফুলটির দিকে তাকিয়েছিলাম অনেকক্ষণ।
 
মোকারম হোসেন এই ফুলটি প্রসঙ্গে প্রথমেই বললেন, বিশেষত চর্মরোগে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় বলে এই গাছটি ঔষধি গাছ হিসেবে সারাদেশে সুপরিচিত। দাদের বাহ্যিক নিরাময়ের জন্য টাটকা পাতার লেই ব্যবহার করা হয়। দাদ ও পাঁচড়ায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর।    
 
বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি Fabaceae পরিবারের ক্যাশিয়া জাতের ফুল। এরা দ্রুত বর্ধনশীল নরম-কাষ্ঠল গুল্ম উদ্ভিদ। উঁচু হয়ে থাকে ১ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত। এর পাতাগুলো অপেক্ষাকৃত বড় এবং সুবিন্যস্ত। ২৫ থেকে ৬০ সেমি পাতাযুক্ত ডালের দৈর্ঘ্য। খাড়া ডাটায় হলুদ রঙের ফুল নিচ থেকে উপরের দিকে ফোটে। ফুলের দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ২০ সেমি।
 
ফুলের পর ফল আসে। ফল ১৫ থেকে ২০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, বিদারী। বীজগুলো ডিম্বাকার ও ঠোঁটযুক্ত বলে জানান মোকারম হোসেন।
 
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
বিবিবি/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।