ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

দেশে নতুন প্রজাপতি ‘রাইহলুদ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
দেশে নতুন প্রজাপতি ‘রাইহলুদ’ ছবি: ফিরোজ আহমেদ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : দেশে পাওয়া গেল নতুন এক প্রজাপতি। এর ইংরেজি নাম স্পটলেস গ্রাস ইয়েলো (Spotless Grass Yellow)।

বৈজ্ঞানিক নাম Eurema laeta sikkima। আমাদের দেশে এর বাংলা নামকরণ না হলেও পশ্চিমবঙ্গের দেওয়া নামানুসারে এ প্রজাপতিটির নাম ‘রাইহলুদ’।
 
এ নতুন প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান আমাদের প্রকৃতির জন্য আশা জাগানিয়া সুখবর। কেননা, অনেক প্রজাতির প্রজাপতি আমাদের জানার আগেই ব্যাপকহারে বন-জঙ্গল ধ্বংসের কারণে চিরবিলুপ্ত হয়ে গেছে।
 
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা ‘আইইউসিএন’ এর রেডলিস্ট প্রজাতির তালিকায় প্রকাশিত হতে চলেছে ফিরোজ আহমেদের তোলা এই প্রজাপতির ছবিটি।
 
জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চার শিক্ষার্থী নাসিফ সাদাত, অনিক চন্দ্র মণ্ডল, ফিরোজ আহমেদ ও তানভীর আহমেদ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দু’বছর মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রজাপতিবৈচিত্র্য এবং মৌসুমভিত্তিক প্রজাপতির প্রাপ্যতা নিয়ে গবেষণার সময় মাত্র দু’বার এই ‘রাইহলুদ’ প্রজাপতির দেখা পেয়েছিলেন।
 
সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এর দেখা পেয়েছিলেন এই গবেষকদল।
 
প্রজাপতি গবেষক তানভীর আহমেদ সৈকত বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই রাইহলুদ Lepidoptera বর্গের Pieridae পরিবারভুক্ত প্রজাপতি। এটি প্রথম পাওয়া গেছে মধুপুর জাতীয় উদ্যানে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর। পরবর্তীতে আরো তিনবার এর দেখা পেয়েছি আমরা। মূলত এটি বনের প্রজাপতি হলেও বনের পাশের খোলা জায়গা কিংবা পার্শ্ববর্তী ফুলের বাগানেও এর দেখা পাওয়া যেতে পারে’।

‘ঢাকার পূর্বাচল এবং রমনা পার্কে এর প্রাপ্যতার কথা শুনেছি’।  
 
এ প্রজাপতির বিস্তৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে প্রজাপতি নিয়ে খুব সামান্যই গবেষণা হয়েছে। তাই আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, এটি আমাদের দেশের আবাসিক প্রজাপতি নাকি পরিযায়ী? তবে এ প্রজাতির ক্ষেত্রে যেহেতু পরিযায়ী হয়ে লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করার ঘটনা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও জানা যায়নি। তাই আমরা ধারণা করছি, এ প্রজাতি বাংলাদেশে আগে থেকেই ছিল।
 
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে এই ‘রাইহলুদ’ প্রজাতি পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।
 
বিশেষজ্ঞের উদাহরণ টেনে তানভির বলেন, স্বনামধন্য প্রয়াত প্রজাপতি বিজ্ঞানী টারবেন বি লারসেন (Torben B. Larsen)  তার ২০০৪ সালে আইইউসিএন, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত Butterflies of Bangladesh - An Annotated Checklist বইতে বাংলাদেশে এ প্রজাতি পাওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
 
প্রজাপতি গবেষণা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট পাওয়া প্রজাপতির প্রজাতির সংখ্যা ৩৪৫ এর কিছু বেশি। প্রজাপতিপ্রেমি ও গবেষকদের সংগঠন Butterfly Bangladesh আমাদের জাতীয় তালিকায় নতুন পাওয়া এ প্রজাপতিগুলোর পরিচিতি জানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
 
প্রজাপতির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তানভীর আহমেদ সৈকত বলেন, প্রজাপতি প্রকৃতির সফল পরাগায়ক এবং পরিবেশের খাদ্য শৃঙ্খলে অবশ্য স্বীকার্য ভূমিকার কারণে এরা পরিবেশের শারীরিক সুস্থতার প্রতীক। তাই নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও বসবাসযোগ্য পৃথিবী তৈরিতে এই নান্দনিক প্রজাপতিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার আমাদের দায়িত্ব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
বিবিবি/এএসআর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।