ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

২৪ ঘণ্টায় ৮১ প্রজাতির পাখির দেখা ঢাকায়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
২৪ ঘণ্টায় ৮১ প্রজাতির পাখির দেখা ঢাকায় ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): আমরা হয়তো অনেকেই জানি না আমাদের প্রিয় শহরে প্রতিদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রায় দু’একশো পাখি! সঠিক তথ্য নেই। তবে গণনা করে এর সঠিক সংখ্যা বের করাও খুব কঠিন নয়।

এতে তৈরি হবে পাখির প্রতি ভালোবাসা। এ উদ্দেশ্যেই সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ব্যতিক্রমী এক প্রতিযোগিতা।
 
পাখির দেশ বাংলাদেশ। প্রায় ৭শ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে আমাদের সবুজ-শ্যামল দেশে। খোদ রাজধানী ঢাকাতেই বছরজুড়ে রয়েছে ২শ প্রজাতির পাখির বিচরণ। ইউরোপের অনেক দেশেও এতো সংখ্যক প্রজাতির পাখি পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি কিছু সংখ্যক প্রকৃতিপ্রেমীর জানা থাকলেও বেশিরভাগ মানুষের কাছে আজও অজানা।
 
২৪ ঘণ্টায় কতগুলো প্রজাতির পাখি পেছনে দৌঁড়ানো সম্ভব?– এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘ঢাকা বার্ড রেস-২০১৬’ শিরোনামে নতুন একটি পাখিদের খুঁজে বের করার ভিন্ন ধরনের একটি অনুষ্ঠান।
 
রাজধানীর সাধারণ মানুষকে ঢাকায় টিকে থাকা পাখি চেনাতে, পাখির আবাসস্থল সম্পর্কে অবহিত করতে এবং পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা তৈরি করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ন্যাচার স্ট্যাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব প্রথমবারের মতো অনাড়ম্বর ঢাকা বার্ড রেস উৎসবের সূচনা করেছে। আয়োজনটির সহযোগিতায় ছিল বিজিএমইএ, বন অধিদপ্তর, আইইউসিএন, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং রবি।
 
ন্যাচার স্ট্যাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় ৮১টি পাখি দেখে এবং ছবি তোলেন অভিনেতা ও বন্যপ্রাণি আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ ও তার দল। ‘নান্দনিক আলোকচিত্র’ ক্যাটাগরিতে আদনান আজাদ আসিফের তোলা খুঁড়ুলে প্যাঁচার (Spotted Owlet) তোলা ছবিটি ‘প্রথম স্থান’ অর্জন করে। এ গ্রুপটি ‘বার্ড ক্লাব অব বগুড়া’ নামে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এছাড়া ‘ঢাকার জন্য বিরল পাখি’ ক্যাটাগরিতে গাঙশালিকের (Bank Myna) তোলা ছবিটি প্রথম স্থান অর্জন করেন গৌরাঙ্গ বিশ্বাস ও তার দল।
 
৩২টি গ্রুপের মোট ১৫৪ জন প্রতিযোগী এতে অংশ নেন। একেকটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিলো ৩ ও ৫জন। প্রতিযোগিতার সময়সীমা ছিলো ১৫ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে ১৬ এপ্রিল (শনিবার) বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। যে কোনো বয়সের যে কোনো পেশার পাখিপ্রেমীর এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল।
 
বার্ড ক্লাব অব বগুড়া গ্রুপের দলপ্রধান হিসেবে ছিলেন আদনান আজাদ আসিফ। গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন ফারজানা রিতা, একে জহুরুল ইসলাম, মহিউল ইসলাম ও মিনহাজ হোসেন বাদল।
 
আসিফ বাংলানিউজ বলেন, প্রতিযোগিতাই ছিলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা সিটির ভেতর বসবাসরত পাখিদের খুঁজে বের করে ছবি তোলা। আমাদের হাতে ঢাকা সিটিতে বিচরণকারী মোট ১০৯ প্রজাতির পাখির তালিকা দিয়েছিল। শর্ত ছিলো পাখি দেখা মাত্র সেই পাখির ছবি তুলে তালিকাটিতে টিকমার্ক দিয়ে রাখা। আরও নিয়ম ছিলো, কেউ আলাদা আলাদা যেতে পারবে না; গ্রুপের সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। সেই মোতাবেক আমাদের গ্রুপ ৮১টি পাখিকে শনাক্ত করে ছবি তুলতে সক্ষম হয়।
 
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ওই ১০৯টি তালিকার বাইরে আরও ৮ প্রজাতির পাখি আমরা খুঁজে পেয়েছি। এগুলো হলো- মদনা টিয়া (Red-breasted Parakeet), সবুজ ঘুঘু বা পাতি-শ্যামা ঘুঘু (Grey-capped Emerald Dove), দাগি ঘাসপাখি (Striated Grassbird), খয়রা বগলা (Cinnamon Bittern), মেঘহও মাছরাঙা (Stro-billed Kingfisher), ধলা-কোমর মুনিয়া (White –rumped Munia) এবং চান্দি ঠোঁট মুনিয়া (White-throated Munia)। ’
 
ন্যাচার স্ট্যাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বন্যপ্রাণি গবেষক হাসান আল রাজী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো পাখি সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করে তোলা। পাখিকে ভালোবাসে প্রত্যেকেই যদি নিজের মতো করে গাছপালা লাগায় তাহলে দেখা যাবে ঢাকার প্রাকৃতিক পরিবেশটা অন্তত কিছুটা হলেও ভালো থাকবে।  
 
পৃথিবীর অন্য দেশে এমন আয়োজনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেক শহরেরই যেমন মুম্বাই বার্ড রেস, সাংহাই বার্ড রেস, জাভা বার্ড রেস কিংবা আমেরিকায় বিগ ইয়ার বার্ড রেস হয়। এবারই প্রথমবারের মতো ঢাকা বার্ড রেস-২০১৬ অনুষ্ঠিত হলো। প্রতি বছর এটা আমরা করে যাবো।
 
ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের একটি অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে এ বন্যপ্রাণি গবেষক বলেন, অনেকেই মনে করেন ঢাকা শহরে কাক-চড়ুই পাখির বাইরে আর কোনো পাখি নেই। যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকেরই পাখি সম্পর্কে নতুন ধারণা, নতুন ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। একটি গ্রুপ ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৯টি পাখি দেখেছে। ওই গ্রুপের সঙ্গে আমি কথা বলে জেনেছি ওরা জানতো যে ঢাকায় মাত্র তিনটি পাখিই রয়েছে। এতে আমরাও খুশি যে ওরা অনেস্টলি এই ৯টি পাখি খুঁজে বের করেছে।
 
গাছপালা বাড়লেই ঢাকা নগরী আরও সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠবে বলে জানান প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এ গবেষক।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।