ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

জামরুল ফুল-ফলের ভিড়ে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
জামরুল ফুল-ফলের ভিড়ে ছবি: বাংলানিউজটোেয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): মধুমাস কড়া নাড়ছে দুয়ারে। আর কিছুদিন পরই আমাদের দেশি ফলগুলো ধীরে ধীরে বাজারে এসে পুরোপুরিভাবে জড়ো হতে শুরু করবে।

জমে উঠবে দেশি সতেজ ফলের বাজারও।

স্বাস্থ্যকর ‘জামরুল‍’ এসব ফলের মধ্যে অন্যতম।  

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের গিয়াসনগর এলাকার ‘নীল আকাশ’ নার্সারিতে পাওয়া যায় দৃষ্টিনন্দন সবুজ জামরুল। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নার্সারিটিতে গিয়ে দেখা মিললো সবুজ জামরুলের।

ছোট আকারের গাছের সরু শাখায় ঝুলে ঝুলে আছে সবুজ জামরুল। নিচের অংশে একটু গোলাপী আভাও জড়িয়ে রেখেছে গুচ্ছগুলো দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য। ফলের ভারে কোনো কোনো ডাল ঘাস-মাটি ছুঁয়ে রয়েছে।

ফলের সঙ্গে রয়েছে অপূর্ব সুন্দর জামরুল ফুলও! সাদা সাদা অনেক অনেক পাপড়ি, কয়েক শ’! ফুলটি সুতার মতো অসংখ্য পাপড়ি মেলে ধরে যেন জানান দিচ্ছে, আমরা সবাই এক ও অভিন্ন।    

ফলগুলো দারুণ মুগ্ধ করবে যে কাউকে। চোখ জুড়ানো ভালো লাগা কাজ করবে।

নার্সারি চাষি মোরশেদ মিয়া বললেন, ‘গাছটির বয়স দুই বছর। কলমের গাছ। তাই দ্রুত ফলন ধরেছে। গত বছরও এ গাছে জামরুল ধরেছে। তবে, এ বছরের মতো এতো বেশি নয়। আমাদের আরেকটি গাছ থাকলেও এই গাছেই বেশি ধরেছে জামরুল’।

মধ্য বয়সের হাস্যোজ্জ্বল মোর্শেদ মিয়া আরও বললেন, ‘এ গাছটি আমাদের নার্সারি এক কোণায় বলে মানুষের আনাগোনা নেই তেমন একটা। আর এ সুযোগে বুলবুলিসহ অন্যান্য পাখিরা এসে জামরুল খেয়ে যাচ্ছে। রাতে আসে বাদুড়ও। আমরা বাদুড়দের বাধা দেই না। ফল তো সবার খাবার’।

ঠোঁট গুজে পাখিদের খাওয়া জামরুল ফলের অবশিষ্ট অংশটি দেখেও অভিভূত হতে হয়। ফলটি পুরো খেতে পারেনি। অর্ধেক খেয়েছে। তারপর নিচে ফেলে নষ্ট করেছে পাখিরা। কিছু কিছু জামরুল বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে নিচে।
   
উদ্ভিদ গবেষক, লেখক ও ‘তরুপল্লব’ এর সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘হালকা মিষ্টি স্বাদযুক্ত রসালো গ্রীষ্মকালীন ফল জামরুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzgium samarangense এবং এরা Myrtaceae পরিবারভুক্ত গাছ। ইংরেজিতে একাধিক নাম রয়েছে। যেমন- Water apple, Royal apple, Java apple ইত্যাদি। ’

জামরুল ফুল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জামরুলের ফুলটি দেখতেও অপূর্ব। ফলের উপকারিতার আড়ালে ঢাকা পড়েছে ফুলের সৌন্দর্য। বসন্তে যখন গাছজুড়ে সরু পাপড়ির অসংখ্য ফুল ফোটে তখন জামরুলকে ফুলের গাছ না ভেবে উপায় নেই। অসংখ্য পাপড়ির ফুলগুলো দেখতে অনেকটা ঝাড়বাতির মতো’।

জামরুলের রঙ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফলটির গড়ন অনেকটা নাশপাতি আকৃতির আর দেখতে সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ ও কমলা রঙসহ বিভিন্ন জাতের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশি ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল। এগুলো থাই জামরুল’।    

চাষ সম্পর্কে মোকারম হোসেন জানান, ‘ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিলে ও ফল পাকার মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। নিজের বাড়ি বা ছাদের অবশিষ্ট জায়গায় যে কেউ ইচ্ছে করলেই এ ফলগাছটি নার্সারি থেকে কিনে এসে মাঝারি বা বড় আকারে ড্রামে লাগাতে পারেন। নিজের হাতে লাগনো একটি গাছে ফুল ফোটাতে অথবা ফল ধরাতে পারা অনেক বড় একটি আত্মতৃপ্তি’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
বিবিবি/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।