প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ থেকে রক্ষায় আবহাওয়া অধিদফতরের অ্যাপস থেকে ২-৩ ঘণ্টা আগেই পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। গুগল প্লে-স্টোরে (BMD Weather App) অ্যাপসটি পাওয়া যাবে।
আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাপসটি ডাউনলোড করে মোবাইল ফোনে ইনস্টল করলে যে সব জেলায় বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে ‘থান্ডারস্ট্রর্ম’ নোটিফিকেশন লেখা থাকবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘১০৯৪১’ নম্বরে কল করে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বজ্রপাতের তথ্য পাওয়া যাবে ৫/৬ ঘণ্টা আগে।
পাশাপাশি আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে আবহাওয়ার অন্যান্য তথ্য মিলবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বজ্রপাতে শুধু মঙ্গলবার (৯ মে) ১৫ জেলায় ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে বাংলানিউজের জেলা ও উপজেলা থেকে পাঠানো খবরে জানানো হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতের ঘটনাগুলো থেকে দেখা যায়, খোলা জায়গায় থাকার কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। খোলা স্থানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে আবহাওয়া অফিসও জানিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন রাতে বাংলানিউজকে বলেন, আকাশে বিদ্যমান জলকণাগুলোতে চার্জ সঞ্চিত হওয়ার কারণে বিপরীত পোলারাইজেশন তৈরি হয়। আর জলকণায় ব্যাপক চার্জ হওয়ার কারণে তা ধরে রাখতে পারে না। ফলে সেগুলো নিচের দিকে চলে আসে এবং বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে মুভমেন্ট করে বজ্রপাতগুলো ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাপদাহের ফলে বজ্রপাত হচ্ছে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। ওই বছর ১৭ জন প্রাণ হারান।
বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় জনসাধারণের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং আবহাওয়া অধিদফতর।
বজ্রপাতের সময় করণীয়:
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, স্থপতি ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বজ্রপাত নিয়ে বেশকিছু পরামর্শ এসেছে।
১. আকাশে ঘনকালো মেঘ দেখা দিলে বজ্রপাতের আশংকা তৈরি হয়। ৩০-৪৫ মিনিট বজ্রপাত স্থায়ী হয়, এ সময়ে ঘরে অবস্থান করাই শ্রেয়।
২. ঘনকালো মেঘ দেখা দিলে খুব প্রয়োজন হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া যেতে পারে।
৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
৪. এ সময়ে ধানক্ষেত, বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে, কানে আঙ্গুল দিয়ে, মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।
৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। টিনের চালা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
৬. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দুরে থাকুন। পরিহার করতে হবে ধাতব মাথা বের করে থাকা ছাতা।
৭. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভিতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোন কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
৮. বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না।
৯. বাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
১০. মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন।
১১. এ সময়ে ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে প্লাস্টিকের অথবা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
১২. খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত থাকুন।
১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনি বিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এ সময় নদীতে থাকলে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ি রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
১৫. প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএম