ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

প্রচণ্ড গরমে শীতল লাউয়াছড়া

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
প্রচণ্ড গরমে শীতল লাউয়াছড়া প্রচন্ড গরমে শীতল লাউয়াছড়া- ছবি: বাংলানিউজ

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে: ঘড়ির কাটায় দুপুর ঠিক ১২টা। মোবাইলের স্ক্রিন বলছে শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখন রাজধানীর তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সূর্যের রশ্মি যেনো শরীরে এসে সুচের মতো বিধছে। রাস্তায় বেরোনো দায়।

তাপদাহের কারণে জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। এমন সময় লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতর যেতেই শীতল অনুভব হলো। প্রথমে মনে হলো হয়তো গাছের ছায়ার কারণে তাপমাত্রা কম মনে হচ্ছে।

কিন্তু কয়েক মহুর্ত দাড়াঁতেই ঘামাক্ত শরীর জুড়িয়ে এলো। আরও খানিকটা সময় দাঁড়াতে এসির ফ্যানমুডে রাখলে যেমন অনুভূতির সঞ্চার হয় তেমন সুখানুভূতি সঞ্চার হলো শরীরজুড়ে। কাকরাইল থেকে রমনা পার্কের পাশ দিয়ে হোটেল শেরাটনের মোড়ে যাওয়ার সময় যেমন কিছুটা শীতল অনুভূতি হয়।

তবে লাউয়াছড়া যেনো একটু বেশিই শীতল। শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরের কয়েক কিলোমিটার ‍জুড়েই এমন অবস্থা বিদ্যমান। তবে মাগুরাছড়ার দিকটায় একটুখানি বেশি মনে হবে।

পুরো রাস্তাটি নানান জাতের বৃক্ষে আচ্ছাদিত। রাস্তার দুই পার্শ্বের বাঁশ ঝাড় একে অপরের সঙ্গে গলাগলি করছে। ঠিক যেনো বিশেষ স্টাইলে গেট সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে। আকাশ ভেদ করে ওঠা চাপালিশ, সেগুন ও অন্য বৃক্ষের শাখাতেও গলাগলি।   কোথাও কোথাও দুই স্তরের প্রকৃতিক সেড তৈরি হয়েছে।
প্রচন্ড গরমে শীতল লাউয়াছড়া- ছবি: বাংলানিউজ কোথাও সোজা, কোথাও আবার সর্পিল বাঁক নিয়ে চলা সড়কটিকে অনেকটা সুড়ঙ্গের মতো মনে হবে। চারদিকে বানর ও চশমা পরা হুনুমানের লাফালাখি। কখনও আবার দল বেঁধে হুনুমানের ডাকাডাকি। চোখের সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে যাবে শেয়াল কিংবা নানান জাতের সরীসৃপ। গাছে গাছে নানান জাতের পাখির তিড়িং বিড়িং নাচ। কখনও শুনতে পাবেন বন্য হরিণ ও বন মোরগের ডাক।   দিনের বেলা ফাঁকগলে টর্চ লাইটের মতো আলো ছড়াচ্ছে সুর্য। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলাতেই অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। তখন একা গেলে গা ছম ছম করবে।

এর আগে শীতের মৌসুমে এখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। তখন দেখেছিলাম ভেতরে প্রবেশ করলেই শীত অনেক বেশি অনূভব হতো। কারো কারো বুকে কাপন ধরে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। তখন বাংলানিউজের সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল বলেছিলেন, এটাকে বলা হয়, ডিপফ্রিজআপ [হিম শীতল] এলাকা।  

প্রচন্ড গরমে চারদিকে দিকে যখন হাহাকার তখন শীতল লাউয়াছড়া দারুণ উপভোগ্য।

এই সড়কটিতে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ রয়েছে। প্রতিনিয়ত যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে মেছো বাঘ, বানর, শেয়াল, হরিণ ও নানান জাতের সরীসৃপ। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে জীব বৈচিত্র্য রক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। যে কারণে গতি সীমিত করে ২০ কিলোমিটার করা হয়।

কিন্তু সেই গতি কোনো যানবাহনেই মানছে না। উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা পেয়ে গতি স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়িয়ে দিচ্ছেন। রোববারও [২৮ মে] একটি মেছো বাঘ ও বানর যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়েছে। দীর্ঘদিনের দাবি রয়েছে রাস্তাটিকে বাইপাস করে দিয়ে শুধু ট্যুরিস্টদের জন্য উন্মুক্ত রাখার। সেটি না হলে অন্তত রাতের বেলা যানচলাচল বন্ধ রাখার। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার অভাবে সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। যে কারণে অনেক দুর্লভ প্রাণী বিলীন হয়ে যাচ্ছে যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এসআই/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।