বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে একসময় ছিলো প্রচুর সংখ্যক ময়না পাখি। কিন্তু খাঁচায় পোষা পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এই ‘পাহাড়ি ময়না’ (Hill Myna)।
বনের মুক্ত পরিবেশে হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ গাছে একটি পাহাড়ি ময়নার দেখা পাওয়ায় যে ভালোলাগা তা খাচাবন্দি ময়না দেখার চেয়ে অনেকগুণ উৎকৃষ্ট। আমাদের উচিত বিপন্ন এ প্রজাতিটিকে মুক্ত পরিবেশে ভালোবাসা।
মুক্ত পাহাড়ি ময়নার রয়েছে গভীর বুনো-সৌন্দর্য। চকচকে কালচে-সবুজ দেহ এই ২৮ সেন্টিমিটারের পাখিটির। যাকে খাঁচায় বন্দি করলে কিছুতেই এই সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘন সবুজ বনের ভেতর গাছের উঁচুতে হঠাৎ দেখা পাহাড়ি ময়নার দৃশ্য আমাদের মনে সীমাহীন ভালোলাগার জন্ম দেয়।
এ বিষয়ে কথা বলতেই বন্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ি ময়না, টিয়া ও মুনিয়া- এই তিন প্রজাতির পাখিই সবচেয়ে বেশি পোষ মানে। বিশেষ করে চা বাগান সংলগ্ন শ্রমিক ও পাহাড়িরা এগুলো পোষে এবং সংগ্রহ করে ওয়াইল্ড কন্ডিশন থেকে। আমাদের বন থেকে পাহাড়ি ময়না বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বড় বড় পাহাড়ি গাছের খোঁড়ল থেকে ময়নার ছানার সঙ্গে মা ও বাবা ময়নাকেও সংগ্রহ করা। এতে তাদের প্রজননে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটসহ আইন প্রযোগকারী সংস্থার ব্যাপক নজরদারির ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরাঞ্চলে পাহাড়ি ময়না ও অন্য বন্যপাখি পোষা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু পোষা নিয়ন্ত্রণ আসার আগে পাহাড়ি ময়নাগুলো ব্যাপক সংখ্যায় নিধন হয়ে গেছে।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে সীমান্ত দীপু বলেন, আমরা যারা সাধারণ মানুষ পাখি পুষতে ভালোবাসি তাদের এ ধরনের ‘ওয়াইল্ড বার্ড’ পোষা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। যারা শখের বশে পাখি পুষতে চান তারা তো বিদেশি সুন্দর সুন্দর ডমেস্টিক বার্ডগুলো (খাঁচায় পোষ পাখি) সংগ্রহ করে পুষতে পারেন। কিন্তু বুনো পরিবেশের পাখি কিছুতেই পোষা যাবে না– এই প্রকৃতিবান্ধব ভাবনাটির প্রয়োগ ঘটাতে হবে আমাদের চিন্তা ও কর্মে।
এতে পাহাড়ি ময়না শিকারিদের কাছে চাহিদাও কমে যাবে। তারা আর পাহাড়ি ময়না সংগ্রহে আগ্রহ দেখাবে না। পাশাপাশি বনের পুরাতন গাছগুলোকে সংরক্ষণসহ বন বিভাগের ব্যাপক নজরদারি বাড়াতে হবে বলে মনে করেন বন্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৭
বিবিবি/এএ