এবারের করালগ্রাসী বন্যায় পানির প্রবল তোড়ে ঘর-বাড়ি ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে ভিজে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়ের সাথে শীতবস্ত্রও। নতুন শীতবস্ত্র কেনার টাকা যোগাড় করাই মুশকিল হয়ে উঠেছে হিমালয় পাদদেশীয় এ জেলার চরাঞ্চলবাসীর পক্ষে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার এমনি কয়েকটি চরের নাম চর যাত্রাপুর, চর গারুহারা, আরাজী পিপুলবাড়ী, চর পার্বতীপুর, পোড়ারচর, মানুষ মারার চর, চর রাউলিয়া।
দুদফা ভয়াবহ বন্যার পানির তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তা-ঘাট, খানা-খন্দক ও ঘর-বাড়ি ভাঙ্গার ক্ষতচিহৃই এখনো সারিয়ে তুলতে পারেনি চরাঞ্চলবাসী। তার উপর শীত কড় নাড়ছে দুয়ারে।
গারুহারা চরের বাসিন্দা আবুল হোসেন (৭০), কবির আলী (৭৫) বাংলানিউজকে বলেন, এবার জারোত যে কি হইবে বাহে, বাঁচি কি না বাঁচি। বানের পানি তো ঘর-বাড়ির সাথে খ্যাতা-কম্বল সউগ ভাসে নিয়্যা গেইচে। জারের (শীত) দিনগুল্যা পার করমো ক্যামন করি আল্লায় জানে।
একই চরের বানেছা বেওয়া (৬৫), হাজেরা বেগম (৪০) বাংলানিউজকে বলেন, গেলো বার তো সরকার থাকি কম্বল দিছিলো। বানে তো সউগ ভাসে নিয়্যা গেইচে। ছওয়া পওয়া নিয়্যা জারের দিনোত যে কি হইবে?
পার্শ্ববর্তী চর পার্বতীপুরের বাসিন্দা জমশেদ আলী (৬৫) বাংলানিউজকে বলেন, হামার বয়সকালে এমন বান দেখি নাই বাহে। সউগ তো ধুয়্যা মুছি নিয়্যা গেইচে। এবার তো গড়ম কাপড়ও নাই বাহে।
চর পার্বতীপুরের আছিয়া বেগম (৫০), শাহিনা খাতুন (৪০) বাংলানিউজকে বলেন, জারের দিন তো আসি গেলো। খ্যাতা-কম্বল, ঢুস্যা তো বানে খাইচে। এবার জারের ঠ্যালায় বুঝি জানটা যাইবে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার বাংলানিউজকে জানান, দুদফা বন্যায় এই অঞ্চলের মানুষ সর্বশান্ত হয়ে গেছে। তারা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘরই ঠিকমতো সারাতে পারেনি। তার উপর আসছে শীত। এই মানুষগুলোর সব শীতবস্ত্র তো বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। আগাম শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা না করতে পারলে তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়বে চরের মানুষ।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বাংলানিউজকে বলেন, শীতে এই অঞ্চলের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। বিশেষ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘবে শীতের তীব্রতা বাড়ার আগেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
এফইএস/জেডএম