ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

গোলাপ গ্রামে এ কোন রোগের হানা?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৮
গোলাপ গ্রামে এ কোন রোগের হানা? গোলাপ ফুলে রোগের বিস্তার দেখাচ্ছেন চাষি

গোলাপ গ্রাম, বিরুলিয়া ঘুরে: বছরের এ সময়টায় বাগানের হাজারো গোলাপের মাথায় উঁকি দেয় সূর্য। সেদিকে তাকিয়ে হাসে গোলাপ, উত্তাপের ঝলক যেন আরও বাড়ে সূর্যের। কিন্তু প্রায় একমাস ধরে সে চিত্র মলিন ‘গোলাপ গ্রামে’। ‘অজানা রোগে’ ফুল থেকে কাণ্ড, তারপর পুরো গাছই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে মৌসুমের কাঙ্ক্ষিত ফুল না পেয়ে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছেন গোলাপ গ্রামের চাষিরা। বিভিন্ন প্রতিষেধক দিয়েও পাচ্ছেন না প্রতিকার।

রাজধানীর অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর, মোস্তাপাড়া গ্রামের বেশ কয়েকটি গোলাপ বাগান ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। ইউনিয়নের এ দু’টি গ্রাম ছাড়া শ্যামপুর, ভাগ্নিবাড়ি গ্রামে ব্যাপকভাবে গোলাপ চাষের কারণে ‘গোলাপ গ্রাম’ বলে পরিচিত।

 

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ৩০ বছর ধরে এ ইউনিয়নে গোলাপ ফুলের চাষ হচ্ছে। ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামের বাসিন্দাই ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত। তবে এ চাষিরাই এতো বছরের অভিজ্ঞতায় হঠাৎ যেন বুঝতে পারছেন না ‘রোগ’টির ধরন। বিভিন্ন প্রতিষেধক ছিটিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না। এতে বাগানে গোলাপের উৎপাদন কমেছে ব্যাপকহারে। চাহিদার সঙ্গে যোগান দিতে না পারায় বেড়েছে ফুলের দামও।

সাদুল্লাপুর বাজারে ১০ বিঘা জমির ওপর গোলাপ বাগান মো. শাহজাহানের। বাগানে গাছ রয়েছে অন্তত ৪৫ হাজার। ফুলে ফুলে শোভিত থাকার কথা এ বাগানে উল্টো ফুল কাটতে হচ্ছে খুঁজে খুঁজে। বাগানে ফুল কাটছেন গোবিন্দ ভৌমিক। তিনি বলেন, বাগানের বয়স চার বছর। এ মৌসুমে বাগান ভর্তি ফুল থাকার কথা। কিন্তু এক মাস আগে ‘অজানা রোগ’ গাছ-ফুল সব নষ্ট করে দিচ্ছে।  

চাষিরা জানান, গত ডিসেম্বরে বৃষ্টির পর হঠাৎ গোলাপ গাছে এই ‘রোগ’ দেখা দেয়। এতে প্রথমে ফুলের নিচের দিকের পাপড়ি কালো হয়ে পড়ে। পাতা নির্জীব হয়ে ঝুলে পড়ে। একপর্যায়ে গাছের কাণ্ডও সংক্রমিত হয়ে পুরো গাছ মরে বিবর্ণ হয়ে যায়।

বাগানে ঘুরে ঘুরে গোলাপ কাটছেন গোবিন্দ

সাইদুর রহমান টুটুল নামে এক ‍চাষি জানান, মাসখানেক ধরে গোলাপ গাছে এ রোগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির (সিনজেনটাসহ আরও বিভিন্ন কোম্পানি) ওষুধ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করে এতোদিন ভালো মুনাফা হলেও এখন গাছ মরে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে রয়েছি।
 
এই ‘অজ্ঞাত রোগের’ বিষয়ে কথা হচ্ছিল গোলাপ চাষি মিজানের সঙ্গে। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি ফুল চাষবাসে যুক্ত। বাগানে নিয়ে তিনি দেখান গোলাপ গাছের বেহাল অবস্থা। দেখা যায় কাণ্ড মরে পুরো গাছই মৃতপ্রায় দশায়।

মিজান জানান, তার ফুফাতো ভাই মো. মালু মিয়া এবার গোলাপ বাগানে ৮ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কলি ধরার পর হঠাৎ ‘রোগে’র আক্রমণে সব নষ্ট হয়ে পুরো টাকাই তার গচ্ছা গেছে।

২ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেন মমিন মিয়া। তিনি জানান, এর আগে কখনো এমন রোগ দেখা যায়নি। বিভিন্ন ‍ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। গ্রামের ৭০ শতাংশ গোলাপ বাগানই কম-বেশি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

মোস্তাপাড়া ফুল মার্কেটকয়েকটি বাগানে কিছুটা ফুল হলে তা নিয়ে যাওয়া হয় পাশের মোস্তাপাড়া ফুল মার্কেটে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুল এলেও বিকেল ৪টা নাগাদ মার্কেট জমে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদই হয়ে যায় ফাঁকা। মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরও একই কথা, অজানা রোগে গাছ নষ্ট হয়ে ফুল উৎপাদন কমে গেছে। অথচ এমন মৌসুমে এ মার্কেটের কারও সঙ্গে কথা বলার সময় থাকার কথা নয়। মোস্তাপাড়া ছাড়াও শ্যামপুরে যে দু’টি ফুলের মার্কেট রয়েছে, সেগুলোরও একই দশা।

মোস্তাপাড়া ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছর এ সময়ে প্রতিদিন মার্কেটটিতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। কিন্তু গত একমাসে তা কমে এক থেকে দেড় লাখ টাকায় নেমেছে। এ মার্কেট থেকে ফুল কিনে পাইকাররা মধ্যরাতে তা নিয়ে যান রাজধানীর শাহবাগ, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন মার্কেটে। যেখান থেকে এ ফুল ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে-কানাচে।

বিয়ে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসহ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনমাস ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। কিন্তু ‘অজানা রোগে’ গাছের বেহাল দশায় এর প্রতিকারে কী করবেন, কোথায় যাবেন, কার শরণাপন্ন হলে ‘মুক্তি’ মিলবে, সে চিন্তায় দিশাহীন ‘গোলাপ গ্রামে’র চাষিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
জেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।