বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ রহিম বাংলানিউজকে বলেন, জামের ইংরেজি নাম Java plum বা Jambul বা Malabar plum। এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini।
তিনি জামের প্রকারভেদ সম্পর্কে বলেন, আমাদের দেশে জাম প্রধানত তিন প্রকার: ‘খুদে জাম’, ‘ঠাকি জাম’ আর ‘হাড়ি জাম’। সচরাচর আমাদের চারপাশে বা বিভিন্ন বসতবাড়িতে খুদে জামই দেখা যায়। এই জাম ধরে বেশি এবং অনেক সময় ধরে ‘খুদে জাম’ পাওয়া যায়। লাউয়াছড়া, চকরিয়া প্রভৃতি ফরেস্টে এই পাহাড়ি ‘ঠাকি জাম’ এর বড় বড় গাছ দেখা যায়। আর যশোর অঞ্চলে পাওয়া যায় এক ধরণের জাম এটাকে ‘হাড়ি জাম’ বলে। এটি অপেক্ষাকৃত বড় আকারের হয় এবং অল্প সময়ের জন্য ধরে।
গুণাগুণ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. এমএ রহিম বলেন, জাম বিশাল ওষুধি গাছ এবং ফলও বহুগুণে গুণান্বিত। সবচেয়ে বেশি আয়রন রয়েছে জামে। বাড়ন্ত ছেলে-মেয়ে, দুগ্ধপ্রদানকারী মা এবং রক্তশূন্যতা যাদের রয়েছে তাদের জন্য জাম অত্যন্ত উপকারী। আর জাম পাতার রস আমাশয়, পেটের পীড়া বা পেটে যত রকমের অসুস্থতা রয়েছে বদহজমসহ এসবের ক্ষেত্রে জামরস বিশাল উপকারী। কারো যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে জামের একটা-দুটো বীজ খেলে সেই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, এ গাছটি রোপন করলে তেমন কোনো যত্ন নিতে হয় না। গরু, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি এর তেমন ক্ষতি করে না। এটা এক ধরনের ‘কাউবয় ফুডস’। রাস্তার ধারে ঝোপে-ঝাড়ে হওয়াতে রাখাল বালক-বালিকারা এর ফল খেলে শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। ‘ইউকিলিটাস, আকাশমণি প্রভৃতি গাছের মতো জাম গাছে কোনো প্রকার নেগেটিভ ইফ্যাক্ট নেই। জাম গাছ অতি সুন্দর এবং পরিবেশবান্ধব একটি দেশীয় প্রজাতির গাছ। আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে এই গাছের ফলটি নিবিড়ভাবে জড়িত। কেননা, আমাদের ছোটবেলার বিখ্যাত ছড়াতেই তো রয়েছে : ‘পাকাজামের মধুর রসে, রঙিন করি মুখ’। কী অপূর্ব!
জামের কাঠ প্রসঙ্গে বলেন, এ কাঠ গুনে ধরে না বা সহজে নষ্ট হয় না। তাই জাম কাঠের গুরুত্ব বেশ গুরুত্ব রয়েছে। চৌকাঠ বা নৌকার জন্য এই কাঠ খুবই ভালো। জামগাছ রাস্তার ধারে লাগালে মাটি আটকিয়ে ধরে রাখে। জাম গাছ ঝড়ে ভাঙে না এবং তীব্র রোদে স্নিগ্ধছায়া দান করে। জাম গাছ পশুপাখিদের আশ্রয় দেয়।
উপকারী এই জাম গাছ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। আগে তো বিভিন্ন মহাসড়কের উপর জাম গাছ ছিল। রাস্তা সম্প্রসারণ করতে যেয়ে প্রায় নব্বইভাগ জামগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কাজেই এই জামের মৌসুমের রাস্তার ধারে ছেলেমেয়েরা জাম কুড়ায়ে কুড়ায়ে খেতো, বাড়িতে নিয়ে যেতো, কিছু মানুষ এই ফল বিক্রি করে দৈনিক আয় করতে পারতো। এক কেজি জাম এখন প্রায় দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত এখন বিক্রি হচ্ছে। কাজেই দুই-চার-দশ কেজি জাম গাছ থেকে পেরে নিয়ে বিক্রি করে কেউ কেউ সংসার চালাতেন। একটা সংসারের ‘সাপ্লিমেন্টারি ইকোনমি সিকিউরিটি’ বা ‘হাউজহোল্ড ফুড সিকিউরিটি’ এ দুটোই বিদ্যমান এখানে। সবকিছু মিলিয়ে ফলটির কোনো বিকল্প নেই বলে জানান অধ্যাপক ড. এমএ রহিম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৮
বিবিবি/এমজেএফ