হ্যারিকেনের তীব্রতা নিয়ে ভারতের উপকূলে আঘাত হানা এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ঝড়ের সার্বিক পরিস্থিতি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক প্রস্তুতি জানাতে বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রী।
ঘূর্ণিঝড়টির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, ‘তিতলি’ বাংলাদেশ থেকে সরে গিয়ে ভোর রাতে গোপালপুরের কাছ দিয়ে ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। আমরা এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়। তাই আমরা শঙ্কামুক্ত- সেটা আমরা বলবো না। আমাদের যে প্রস্তুতি ছিল ঘূর্ণিঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের আধিক্য থাকায় উপকূলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং উপকূলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এছাড়া সারা দেশে মেঘলা আবহাওয়াসহ বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে।
তবে সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত থেকে নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ সংকেত আগামী দু’দিন বহাল থাকতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী মায়া আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। তার নির্দেশে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমারা শতভাগ প্রস্তুত।
‘তিতলি’তে দেশের ১৯টি জেলা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে হয়তো বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ভোলা, চাঁদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
তিনি বলেন, এসব জেলার প্রশাসক এবং দলীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রতি মুহূর্তে কোথায় কী প্রয়োজন তা মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটর করছি। একেকজন কর্মকর্তা একেক জেলার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। উপকূলীয় ১৯ জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল ঘোষণা করেছি।
ওই ১৯ জেলার মানুষকে সতর্ক করে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জনগণ যাতে নিরাপদ স্থানে চলে আসে। এরই মধ্যে বন্যা-সাইক্লোন সেন্টার, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খালি করে রেখেছি, যদি আঘাত করে তাহলে নিরাপদে যেন সবাই আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার-ভিডিপিরসকল সদস্যদের অ্যালার্ট করে রেখেছি। যাতে প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নিতে পারে। জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে রেডিও, টেলিভিশন ও টোল ফ্রি আবহাওয়া বার্তা ১০৯০ এর মাধ্যমে আবহাওয়ার তথ্য জেনে ঘর থেকে বের হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
উপকূলীয় জেলাগুলোতে সব সময় খাদ্য মজুদ থাকে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২৫ হাজার শুকনো খাবার মজুদ রেখেছি। প্রত্যেক জেলায় ১০০-২০০ মেট্রিকটন করে চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়া টিন, নগদ টাকাও রাখা হয়েছে। যাতে মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে না থাকতে হয়। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এ মন্ত্রণালয়ে গত পাঁচ বছরে কোনো ‘দুই নম্বরি’ হয়নি। কোনো জেলা-উপজেলায় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কোনো কথা হয়েছে বলে খবর পাইনি।
দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলীর নির্দেশনা মোতাবেক ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভা বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া উপকূলীয় ১৯ জেলার প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সর্তক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, প্রত্যেকটি উপজেলায় এবং জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রেল রুম এনডিআরসিসি এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রয়োজনে উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণকে স্বল্প সময়ের নোটিশে উপযুক্ত নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ডিজি (অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এজাজুল বারী চৌধুরী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ, সিপিপির পরিচালক আহমাদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
এমআইএইচ/এসআই