বুধবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে বাইক্কা বিলে গিয়ে দেখা যায়, কমে গেছে পর্যটকও। দেখা গেল, অল্প সংখ্যক পাখির কলকাকলি, খুনসুটি, ওড়াওড়ি, জলের ভেতর ডুব দেওয়া আর দল বেঁধে সাঁতার কাটার দৃশ্য।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের পূর্বদিকে প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম। ২০০৩ সালের ১ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় বিলটিকে মৎস্য সম্পদের সংরক্ষিত জলাভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়।
পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের দূরবীক্ষণ যন্ত্রের তত্ত্বাবধায়ক রাজ আহমেদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা আরো কমে গেছে। তবে ভোর এবং সকালে কিছু পাখিদের টাওয়ার কাছে পাওয়া যায়।
বড় গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সম্পাদক মিন্নত আলী বলেন, পাখি আছে, তবে নানা বিলে ওরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
ঢাকার লালবাগ থেকে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসেছেন পর্যটক শফিকুর রহমান চৌধুরী ময়না। বাইক্কা বিলে গিয়ে হতাশ হয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি ৩ বছর আগে যখন এসেছিলাম তখন প্রচুর পাখি ছিল। কিন্তু এবার এসে আমি নিজেই অবাক। পাখি গেল কোখায়!
আক্ষেপের সাথে তিনি আরো বলেন, বাইক্কা বিলে আসতে আসতে দেখলাম প্রচুর ফিসারি হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাভূমিকে ফিসারিতে রূপান্তরিত করা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। মানুষের পা যেখানে পড়েছে সেখানেই প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
বাইক্কা বিলে বেড়াতে আসা হোসনে আরা বেগম বলেন, বেশি সংখ্যায় পরিযায়ী পাখি দেখার আশায় এসেছিলাম; কিন্তু এবার অনেক কমে গেছে পাখির উপস্থিতি।
বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ পাখি কমে যাবার কারণ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, এর প্রধান কারণ দুটো। প্রথমত, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাইক্কা বিলের আশপাশে অনেক কৃত্রিম মাছের খামার বা ঘের তৈরি হয়েছে। ফলে মানুষ আনাগোনা আগের থেকে প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখিরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। মানুষজন দেখলে পাখিরা ভয় পায় এবং উড়াল দেয়।
দ্বিতীয় কারণ, গত বছর ২০১৭ সালের বন্যায় বাইক্কা বিলের প্রচুর জলজ উদ্ভিদের পচন ধরে এবং কিছু জলজ উদ্ভিদ ভেসে যায়। ফলে এ সকল শাপলা-পদ্ম বা অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের অভাবে বাইক্কা বিল আজ জলজ উদ্ভিদশূন্য হয়ে পড়ে। এ কারণে পরিযায়ী পাখিরা নিজেদের লুকাতে পারছে না বলে তারা এখানে আসছে না।
পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে তখন তারা দুটো বিষয়কে সববেচে বেশি প্রাধান্য দেয়- নির্জন স্থান এবং প্রচুর জলজ উদ্ভিদ সমৃদ্ধ জলাভূমি। কারণম জলজ উদ্ভিদের ভেতর এরা লুকিয়ে থেকে শক্রর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে। এদুটোর অভাব হলেই তারা ঝাঁকে ঝাঁকে আসা বন্ধ করে দেয় বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
বিবিবি/এমজেএফ