সরেজমিনে জানা যায়, নিকলী উপজেলা সদরের কুর্শ্বা এলাকায় জাফর আলী মেম্বরের মালিকানাধীন মেসার্স কামাল ব্রিকস নামে ইটভাটাটি কৃষকের ফসলি জমি এবং নদী পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। নিরীহ কৃষকরা প্রতিবাদ করেও ফল পাচ্ছেন না।
ভূক্তভোগী কৃষকরা জানান, ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সহজে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। মালিকরা ভাটার পাশের কৃষকের জমি জোর করে দখলে নিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া ইটভাটার স্তুপিকৃত মাটি ফসলি জমিতে এসে পড়ায় জমি ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আবার অনেকের ফসলি জমি রাতের আঁধারে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে অনেক বর্গাচাষি জমি আবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
তাদের এসব জমি কেউ বর্গা হিসেবে না নেয়ায় বিপাকে রয়েছেন বলেও জানান কৃষকরা।
এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এমকেএম ইটভাটার পাশের জমিগুলো দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়।
প্রায় ১২ বছরের আগে এমকেএম ইটভাটাটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে প্রায় ২৫ জন কৃষকের শতাধিক একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান এসব কৃষকরা।
উপজেলা সদরের কুর্শ্বা পশ্চিমপাড়া গ্রামের আরেক কৃষক কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, যেখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে, সে জমির বেশিরভাগ জবর দখল করে নেওয়া হয়েছে। তাদের কাগজপত্র থাকলেও তা ফেরত দিচ্ছেন না।
স্থানীয় জমির মালিক মোশারফ হোসেন মাজু বাংলানিউজকে জানান, তাদের জমিতে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। আপসে না দিলে জোর করে তাদের জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ইটখলাগুলো নদী ভরাট করে ফেলছে। এতে এলাকার কৃষি জমির ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে এমকেএম ইটভাটার মালিক পক্ষের জহুরুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, সব নিয়মনীতি মেনেই ইটভাটা করা হয়েছে। কেউ যদি শত্রুতার জেরে অভিযোগ করে তাহলে তাদের কিছুই করার নাই। স্থানীয় প্রশাসন সবই জানে।
ইটভাটা থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনুদান দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
এসব ফসলি জমি দখল বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন মাসুদ নামে স্থানীয় এক ভুক্তভোগী সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বেশিরভাগ ইটভাটায় নিয়ম নীতি শুধু কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে আইনের তোয়াক্কা করছেন না তারা। নিয়ম নীতি উপেক্ষা করেই ইটভাটাগুলো চলছে। আবার অনেকগুলো চলছে কোনরকম ছাড়পত্র ছাড়াই।
জেলা কালেক্টরেট সূত্রে জানা যায়, সরকারি হিসেবে জেলায় ইটভাটা রয়েছে ১০৪টি। তবে বাস্তবে প্রায় দেড়শ’র মতো ইটভাটা রয়েছে বলে জানা যায়।
এগুলোর বেশিরভাগেরই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই।
জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি মো. খালেকুজ্জামান অনেক ইটভাটার ছাড়পত্র না থাকার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কোনোটির বিষয়ে আদালতে মোকদ্দমা চলছে।
কৃষি জমির বিষয়ে কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এক ফসলি জমি ও বাড়িঘর থেকে দূরে এমন জায়গায় ইটভাটা স্থাপন করার কথা সরকারি নীতিমালায় বলা আছে। আর এসব বিষয় পরিবেশ অধিদফতর দেখে থাকেন। আমাদের এখানে কিছু করার নাই।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের সহায়তায় আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এ ব্যাপারে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাদের বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যাবে না এবং যেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনে হবে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
আরএ