মানুষ যেমন ভিড়ের মধ্যে থেকে শিকড়ে ফিরতে চায়, আবার মনের একাকিত্ব ঘোঁচাতে ভিড়ে হারাতেও চায়। আর ঈদের মতো উৎসব হলে তো কথাই নেই।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সরকারি ছুটি শেষে অফিস-আদালত খোলা থাকালেও সেখানে চলছে ছুটির আমেজ। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি থাকায় বেশিরভাগ সরকারি চাকুরেরা একদিন ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে গ্রামেই অবস্থান করছেন। যারা অফিসে এসেছেন কোলাকুলি ও কুশলাদি বিনিময় করে পার করছেন ঈদ পরবর্তী অফিস।
শিকড়ের টানে ফেরা মানুষগুলোর জন্য ঈদের দিন থেকেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। শেষ পর্যন্ত ঘটলোও তাই। কখনও রোদ, কখনও মেঘ, আবার কখনও বৃষ্টি। এভাবেই কেটেছে ঈদুল আজহার সকাল-সন্ধ্যা। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের রেইন গেজ (বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র) বলছে ওইদিন ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। এতে একরকম ভালোই হয়েছে। একদিকে কমিয়েছে গরম অন্যদিকে কোরবানির রক্ত ও বর্জ্য গেছে ধুয়েমুছে।
এরপর ঈদের দ্বিতীয় দিন (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর থেকে থেমে থেমে কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি কখনও মুষলধারে বৃষ্টি চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এদিন ১৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে মহানগরীর অনেক নিচু এলাকার সড়কে পানি জমে যায়। রাস্তায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা চলাচল কম থাকায় ঈদ বিনোদনের জন্য বাইরে যেতে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
বুধবার (১৪ আগস্ট) ভোর থেকে আবারও শুরু হয়েছে বর্ষণ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে তাই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন রাজশাহীবাসী। বৃষ্টিতে মহানগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জিয়া শিশু পার্ক, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক, পদ্মাপাড়সহ মহানগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোও প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। ঈদের ছুটিতে এমনিতেই পথঘাট ফাঁকা, যানবাহন চলাচল কম। এর ওপর বৃষ্টি চলায় প্রধান প্রধান সড়কগুলোও এখন প্রায় জনশূন্য। ঘরবন্দি বিনোদনপিপাসু মানুষগুলোর একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্ট্রাগ্রাম, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, অনলাইন নিউজপোর্টাল ও টেলিভিশন।
মহানগরীর শিরোইল মাস্টারপাড়া এলাকার রিফাত, সাগর, আরিফিন, বর্ষা, জুঁই ও স্বপ্নারা বাংলানিউজকে বলেন, বেড়াতে না গেলে কী আর ঈদ মনে হয়! কিন্তু শেষ শ্রাবণের বৃষ্টি আমাদের গৃহবন্দি করে রেখেছে। বৃষ্টির কারণে কোথাও বের হতে পারেননি। ঈদের দিন কোরবানি আর এরপর থেকে বৃষ্টিস্নাত সকাল-সন্ধ্যা নিয়ে দিয়ে উৎসব কাটছে তাদের। কত পরিকল্পনাই ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বাংলানিউজকে বলেন, ১২ আগস্ট সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এরপর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি চলছেই। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ৫০ দশমিক ০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার ৯ মিলিমিটার, মঙ্গলবার ১৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং বুধবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়খণ্ড ও তৎসংলগ্ন এলাকার দক্ষিণাংশে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এতে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের অথবা ভারী বর্ষণ হতে পারে। তবে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এসএস/এএ