গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে অবৈধভাবে পাচারের সময় মিরপুর রূপনগর থানা পুলিশের সহযোগিতায় একটি বনরুইসহ তিন পাচারকারীকে আটক করা হয়। এর আগে চলতি বছরের ২৪ মে এবং ৮ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী বনরুই উদ্ধার করা হয়।
বন্যপ্রাণী গবেষকরা জানান, প্রাণীটি বাংলাদেশে মহাবিপন্ন অবস্থায় আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তরবঙ্গে সামান্য সংখ্যক বনরুই প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে আছে।
বনবিভাগ এবং রূপনগর থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার উদ্ধার হওয়া বনরুইটি খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় আনা হয় নওগাঁ নিয়ে যাওয়ার জন্য। পাচারের সময় আটক ব্যক্তিরা হলেন, নওগাঁ জেলার জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার আব্দুল আজিজ (৫৫) এবং বান্দরবানের নজরুল ইসলাম। ঢাকায় হাত বদল হয়ে এই প্রাণীটি নওগাঁয় নিয়ে যেতো জাহাঙ্গীর আলম। এরপর সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হতো প্রাণীটিকে।
রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রব্বানী বাংলানিউজে বলেন, বনরুই পাচারের ঘটনায় আটকদের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমরা রিমান্ডের আবেদন করেছি। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তখন জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো পাচারকারী চক্র সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে পারবো।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক এবং আব্দুল্লাহ আস সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, উদ্ধার বনরুইটির অবস্থা বর্তমানে ভালো। এর আগেও যেহেতু তিনটি বনরুই উওরবঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাই আমরা ধারণা করছি এ প্রাণীটিকেও উত্তরবঙ্গের কোনো সীমান্ত দিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে নওগাঁ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মীরপুরের রূপনগর থেকে বনরুইসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
বনরুই বিষয়ে গবেষণা করছেন বন্যপ্রাণী গবেষক শাহরিয়ার কায়ছার সিজার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে অল্প সংখ্যক বনরুই টিকে আছে। পাচার বন্ধে সরকারের আরও বেশি নজরদারি ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। উদ্ধার হওয়া বনরুইগুলো ট্র্যাকিং করার ব্যবস্থা করা গেলে ভালো, তাহলে প্রাণীগুলো কখন কি অবস্থায় আছে তা জানা যাবে। পাশাপাশি পাচারকারীরা তখন এগুলোকে ধরতেও ভয় পাবে।
বন্যপ্রাণী বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন কনজারভেশন ন্যাচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সের বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, সুস্বাদু মাংস, চামড়া আর লোকজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হওয়ায় বাড়ছে বনরুইয়ের পাচার। এরই মধ্যে প্রাণীটি ‘লাল তালিকায়’ স্থান পেয়েছে। এখন সরকারের উচিত অতি দ্রুত এই প্রাণীটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া।
বন্যপ্রাণী পাচারের ওপর নজরদারি করা বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ট্রাফিক’ এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গত ১৬ বছরে এই প্রাণীটি প্রায় ১৬ লাখ পাচারের ঘটনা ঘটেছে।
বনবিভাগ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবছর চারটি বনরুই উদ্ধার করতে পেরেছে, তবে এর বাইরেও অনেক বনরুই পাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে বন্যপ্রাণী গবেষকদের ধারনা। সরকার অতি দ্রুত সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে আঁশযুক্ত স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণীটি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
আরকেআর/জেডএস