গত বছরের আগস্টে নিজ দেশের সংসদের সামনে পরিবেশ রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামে এ সুইডিশ কিশোরী। আন্দোলনের নাম দেওয়া হয় ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’।
মেয়েটি যে কতটা প্রভাবশালী তার প্রমাণ মিলেছে গত শুক্রবারই (২০ সেপ্টেম্বর)। এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ অধিবেশনে আমন্ত্রণ পেয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে গ্রেটা থানবার্গ। তবে, অধিবেশন শুরুর আগেই রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে এ কিশোরী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের আন্দোলন।
শুক্রবার প্ল্যাকার্ড-স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটান। জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। সবারই এক দাবি- জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাও।
এদিন নিউইয়র্কের ব্যাটারি পার্কের সমাবেশে পৌঁছামাত্রই রীতিমতো রকস্টারের মতো সংবর্ধনা পান গ্রেটা থানবার্গ। চারদিকে শুরু হয় ‘গ্রেটা’, ‘গ্রেটা’ রব।
সবাই অধীর আগ্রহ, কী বলবেন তাদের কিশোরী নেতা। হতাশ করেননি গ্রেটা। বরাবরেই মতোই সাহসী বক্তব্য দিয়ে মাতিয়ে তোলেন আন্দোলনকারীদের।
গ্রেটা থানবার্গ বলেন, এটিই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়বায়ু আন্দোলন। এ নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত। কারণ, আমরা সবাই মিলেই এটি করেছি।
তার মতে, আন্দোলনে অন্তত ৪০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন এবং এ সংখ্যা আরও বাড়ছে।
গ্রেটা এখন আর শুধু সুইডেনের নয়, হয়ে উঠেছেন গোটা বিশ্বের নাগরিক। বাবা-মায়ের ছোট্ট বাড়ি নয়, এখন পৃথিবীটাই তার ঘর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সেই ঘর আজ ধ্বংসের মুখে। এ প্রসঙ্গে মেয়েটি বলে, আমাদের ঘরে আগুন লেগেছে। আর এটা শুধু ছোটদের ঘর নয়, আমরা সবাই এ ঘরেই থাকি- এটা সবারই ক্ষতি করছে।
বয়স কম হলেও বিশ্বরাজনীতি ভালোই বোঝেন গ্রেটা। ক্ষমতাবান নেতারা বহুবার জলবায়ু পরিবর্তন রোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুতেই। এ নিয়ে তার কথা, নেতাদের শূন্য প্রতিশ্রুতিগুলো সবই এক, মিথ্যাগুলো এক, একই তাদের নিষ্ক্রিয়তা।
একারণে সবার চোখ এখন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের দিকে। গ্রেটা বলেন, তাদের সুযোগ এসেছে নেতৃত্ব নিয়ে প্রমাণ করার যে, তারা আসলেই আমাদের কথা শুনতে পান।
শুধু চমৎকার বক্তৃতাই নয়, বিশ্বনেতাদের কাছে রীতিমতো সতর্কবার্তাও দিয়ে রেখেছেন গ্রেটা থানবার্গ। বক্তব্য শেষ করার আগে তার চিৎকার করে প্রশ্ন, কে আমাদের ভয় পাচ্ছে? জনগণের শক্তি এমনই। মাত্র তো শুরু। তাদের ভালো লাগুক না লাগুক, পরিবর্তন আসবেই।
শুধু কথায় কখনো নেতা হওয়া যায় না, কাজেও প্রমাণ দেখাতে হয়- গ্রেটা সেটা ভালোভাবেই বুঝেছেন। সুইডেন থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেতে তিনি প্লেন বা জাহাজে ওঠেননি, গিয়েছেন নৌকায় চড়ে। কারণ, ইঞ্জিনচালিত যানবাহনও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ, আর তার আন্দোলন পরিবেশ রক্ষার জন্যই।
কী ঘটেছে শুক্রবার?
কিরিবাতি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতুর মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা যোগ দিয়েছেন গ্রেটার জলবায়ু আন্দোলনে। তাকে সমর্থন জানিয়েছে অনলাইনে পোস্ট করেছেন আন্দোলনের ছবি।
অস্ট্রেলিয়ায় অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ যোগ দিয়েছেন এ আন্দোলনে। কিছু কিছু এলাকায় স্কুলশিক্ষার্থী ও শ্রমিকদেরও আন্দোলনে নামতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
আন্দোলন ছড়িয়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকাতেও।
ঘানায় শিক্ষার্থীরা রাজধানী আকরা অভিমুখে পদযাত্রা করেছে।
ভারত-থাইল্যান্ডে ‘ডাই-ইন’ (মৃতের অভিনয়) করেছেন আন্দোলনকারীরা।
জার্মানির পাঁচ শতাধিক শহরে পথে নেমেছেন জলবায়ু আন্দোলনকারীরা। দেশটির সরকার ইতোমধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে ৫৪ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে।
আর যুক্তরাজ্যের চারটি দেশেই লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।
জাতিসংঘ অধিবেশন শুরু হলে এ আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
একে