বুধবার (৬ নভেম্বর) এমন তথ্যই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
গত ৪০ বছরের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে চালানো ওই গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ।
গবেষকরা জানান, পরিবেশ যে হুমকির মুখে আছে, সেই বিষয়ে সতর্ক করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
স্যাটেলাইট ডাটা অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে, নতুন গবেষণাটি বলছে, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় যে বিপর্যয় ঘটবে, তা বুঝতে শুধু বিশ্বের উপরিভাগের তাপমাত্রা পরিমাপ করাই পর্যাপ্ত নয়।
তাই গবেষকরা গত ৪০ বছরের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দীর্ঘসময়ের জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দেশকগুলো গ্রাফের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন।
জনসংখ্যা ও প্রাণীদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার, মাংস উৎপাদন, বিশ্বজুড়ে মাংস উৎপাদনের পরিমাণ, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ইত্যাদি নির্দেশক ব্যবহার করা হয়।
সম্প্রতি বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে। যেমন- নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রতি যুগে বায়ু ও সৌর শক্তির ব্যবহার ৩৭৩ ভাগ করে বাড়ছে। তারপরও এটি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ থেকে ২৮ গুণ কম।
নির্দেশক অনুযায়ী জলবায়ু সংকট জরুরি অবস্থায় পৌঁছেছে।
গবেষণা প্রবন্ধটির প্রধান লেখক ইউনিভার্সিটি অব সিডনির প্রফেসর ড. থমাস নিউসাম বলেন, জরুরি অবস্থার মানে হলো, আমরা যদি এখনই কার্বন নিঃসরণ, খামারে পশু উৎপাদনের হার, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার না কমাই, তাহলে আমাদের ধারণার চেয়ে প্রকট রূপ ধারণ করবে এই সংকট।
আগেই বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এমন সতর্কবার্তাগুলো নতুন গবেষণাটিতে থাকলেও তা অন্যগুলো থেকে আলাদা। এতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এই সংকট কতোটা তীব্র এবং বিষয়টি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের জনগণ ও সরকারের উদ্যোগ কতোটা অপর্যাপ্ত।
গবেষণায় ছয়টি ক্ষেত্র দেখানো হয়েছে, যেখানে জরুরি পদক্ষেপ নিলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
জ্বালানি ব্যবহার: রাজনীতিবিদদের উচিত কার্বন ফি বেশি নির্ধারণ করা, যেন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমে। জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করতে হবে।
দূষক কমানো: মিথেন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন- এধরনের দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাওয়া দূষকগুলোর ব্যবহার কমালে আগামী কয়েক যুগের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
প্রকৃতি সংরক্ষণ: বনগুলো রক্ষা করতে হবে। নতুন বনায়ন জরুরি। তাহলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
খাদ্যাভ্যাস: খাদ্যাভ্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। প্রাণীজাত খাবার খাওয়া কমিয়ে উদ্ভিদজাত খাবার খেতে হবে। একইসঙ্গে খাবার অপচয় কমাতে হবে।
অর্থনীতি: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে উৎপাদন বাড়ানোর হার থামাতে হবে।
জনসংখ্যা: বিশ্বের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ শিশুর জন্ম হয়।
১৫৩টি দেশের প্রায় ১১ হাজার গবেষক-বিজ্ঞানী এই গবেষণাটি সমর্থন করেছেন। সমর্থনদাতাদের সই রয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
ড. নিউসাম বলেন, কার্বন নিঃসরণ করে, তাপমাত্রা বাড়িয়ে আমরা যে গত ৪০ বছর ধরে জলবায়ু বিপর্যয় ডেকে এনেছি, এটা উপলব্ধি করতে বড়সড় বিজ্ঞানী হতে হয় না।
এ পর্যন্ত অসংখ্য জলবায়ু সম্মেলন হলেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে সবাই। একারণে গবেষকরা বিরক্ত। তবে দ্রুত বাড়তে থাকা জলবায়ু আন্দোলন নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। কারণ মানুষের মধ্যে জলবায়ু সচেতনতা বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্মহার কিছুটা কমেছে- এটি একটি আশার কথা হলেও বিপর্যয় মোকাবিলায় এনিয়েও কাজ করতে হবে বলে জানান গবেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
এফএম/এসএ