ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বনায়নের নামে শতবর্ষী গাছ কাটার পাঁয়তারা!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
বনায়নের নামে শতবর্ষী গাছ কাটার পাঁয়তারা! চাউতলী বিটের প্রাকৃতিক ডুমুর। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: আবারও ঝুঁকির মুখে পড়তে চলেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মূল্যবান প্রাণীজগৎ। লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী বিটের মধ্যে কাগজে-কলমে সামাজিক বনায়নের গাছ দেখিয়ে শতবর্ষী মূল্যবান বিভিন্ন ফলের গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এভাবে চলছে লাখ লাখ টাকার বনজসম্পদ লুটপাটের পাঁয়তারা।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সংরক্ষিত বন। এখানে পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন উল্লুকসহ চশমাপড়া হনুমান, চমশাপড়া হনুমান, কুলু বানর, কোটা বানর, লজ্জাবতী বানর, উড়ন্ত কাঠবিড়ালী, বড় বাদুর, গন্ধগোকুল প্রভৃতি মূল্যবান প্রাণীজগৎ রয়েছে।

এরা পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল ফলের গাছের ওপর। তাদের খাদ্যসম্ভার ফল গাছ কেটে ফেললে হুমকির মুখে পড়বে বণ্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব।

লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী বিট চাউতলী। এ বিটের ফলের বাগানের আয়তন ৩২ হেক্টর। এখানে ৯০ শতাংশ প্রাকৃতিক ফলের গাছে পরিপূর্ণ। যে গাছগুলোর বয়স প্রায় ৫০ থেকে একশ বছর এবং এ গাছগুলোই বণ্য প্রাণীদের দৈনিক খাবারের জোগান দিয়ে থাকে। এখানে রয়েছে চাপালিশ, বহেরা, ডুমুর, হরিতকি, আমলকি, জারুল, রিঠা, ডেউয়া, লটকন, কাঠ বাদাম, লুকলুকি, কাউফল, বন উরি, কাটা জামসহ অর্ধশতাধিক ফল গাছ। যা থেকে ফল আহরণ করেই বেঁচে আছে বণ্যপ্রাণীরা। ৬০৯১ নম্বরের মূল্যবান কাঠ বাদাম গাছ।  ছবি: বাংলানিউজসম্প্রতি লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী চাউতলী বিটের পাহাড়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ফলের গাছেই গায়েই লাল রঙের নম্বর লেখা রয়েছে। ৬০৯১ নম্বর গাছটি বিপন্ন প্রজাতি কাট বাদাম বা বাদাম ফল। ১০৬৮ নম্বর লেখা রয়েছে ডুমুর। পাহাড়ের উপর বিশালাকৃতির এ গাছটির গায়ে অজস্র ডুমুর ফল ধরে রয়েছে।

৩২ হেক্টরের এ ফলের বাগানে মাত্র ১০ শতাংশে রয়েছে উপকারভোগীদের লাগানো একাশিয়া এবং বেলজিয়া গাছ। কিছুদিন আগে সেই একাশিয়া (আকাশমনি) এবং বেলজিয়া গাছগুলো পাশাপাশি প্রায় সব ফলের গাছ ‘লাল নম্বরযুক্ত’ করে কেটে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ উঠেছে মৌলভীবাজারের বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই বিটের রয়েছে অতিমূল্যবান সাতটি বড় বড় আকারের লোহা কাঠের গাছ। শতবর্ষী চাপালিক গাছও রয়েছে কয়েকটি। যেগুলো বের (পাশ) প্রায় ত্রিশ ফুট। এছাড়া রয়েছে অতি বিরল প্রজাতির বড় আকারের ধূপ বা ধুনা গাছ। সামাজিক বনায়ন বা উপকারভোগীদের গাছ দেখিয়ে অতি মূল্যবান লোহাকাঠ, শতবর্ষী চাপালিশ, ধূপ গাছগুলো কেটে বিক্রি করাই তাদের টার্গেট।
চাউতলী বিটের মূল্যবান ধূপ গাছ।  ছবি: বাংলানিউজ
 বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বাংলানিউজকে বলেন, সংরক্ষিত বনে সামাজিক বানায়নের নামে একাশিয়া আর বেলজিয়াম গাছ লাগানোর পক্ষে ছিলাম না। এগুলো করাই হয়েছে দূরভিসন্ধিমূলকভাবে। সামাজিক বনায়নের নাম করে বনের শতবর্ষী প্রাকৃতিক ফলের গাছপালা ধ্বংস করার পাঁয়তারা। এ সঙ্গে আমরা বনবিভাগের সংশ্লিষ্টতাকে উড়িয়ে দিতে পারি না। দ্রুত ফল গাছগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বণ্যপ্রাণী বিশারদ ড. মনিরুল খান বলেন, এ সফল ফল-ফুলের গাছগুলোর ওপরই বণ্যপ্রাণীরা সরাসরি নির্ভরশীল। এ গাছগুলো যত কমবে ততই কিন্তু বণ্যপ্রাণীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আ ন ম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আগের তালিকা আর গ্রহণ করা হবে না। চাউতলী বিটে চাপালিশ, হরিকতি, বহেলা, ডুমুর, জারুল, লোহাকাঠসহ প্রাকৃতিক ফলের গাছগুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সামাজিক বনায়নের আওতায় লাগানো আকাশমণি-বেলজিয়াম গাছগুলোকে পুনরায় মার্কিং (শনাক্ত) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
বিবিবি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।