দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও তার তেজ পদ্মাপাড়ের শীতার্ত মানুষের শরীরে উষ্ণতা ছড়াতে পারছে না। আগেই নামছে সন্ধ্যা।
রাজশাহী আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৬৫ শতাংশ। সকাল সূর্য উঠলেও তার তেজদীপ্ত কিরণ ছিলো না বললেই চলে।
রাজশাহী আবহাওয়া কার্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে প্রায় ১০ দিন থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এর মধ্যে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও ২১ ডিসেম্বর তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে ২২ ডিসেম্বর আবারও সেই তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এরপর ২৩ ডিসেম্বর আবারও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ডিসেম্বর রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ২৫ ডিসেম্বর ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৬ ডিসেম্বর ১০ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ ডিসেম্বর ১১ দশমকিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৯ ডিসেম্বর ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রোববার ছিলো ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ফলে রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ ৮ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই ওঠানামা করছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সেই বইয়ে চলা কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁপছে ছিন্নমূল মানুষ। শীতের তীব্রতায় রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। পথের কিনারায় তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ দোকানপাট ও হাট-বাজার। গ্রামগুলোতে শীতের প্রকোপ আরও বেশি। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
মহানগরসহ রাজশাহী অঞ্চলের হাট-বাজারে গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। শীতবস্ত্র কিনতে প্রতিদিনই মহানগরের ফুটপাতে নিম্ন আয়ের লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। তবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা যেতে পারছেন না কোনো দোকানেই। অনেকেই তাকিয়ে আছেন সমাজের বিত্তবান ও সরকারি সহায়তার দিকে। তবে ইতোমধ্যেই সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ডিডি) ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এরমধ্যে নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এরই মধ্যে চারটি ওয়ার্ডে ৩০টি রুম হিটার লাগানো হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের প্রস্তুতি থাকায় চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান হাসপাতাল উপ-পরিচালক।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানিয়েছেন এরই মধ্যে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ শুরু করা হয়েছে। ৬০ হাজার পিস কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। শিগগিরই ত্রাণ তহবিল থেকে আরও কম্বলের চাহিদা পাঠানো হবে। সিটি করপোরেশন এলাকার বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থানে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। সকারের বিভিন্ন সংস্থাও নিজ নিজ উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। সবমিলিয়ে ছিন্নমূল মানুষ যেন এই শীতে কষ্ট না পাচ্ছে, সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
এদিকে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলে চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শেষে জানুয়ারিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে দুইটি তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈতপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
এসএস/এএটি