ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ঘূর্ণিঝড় আম্পান: নির্ঘুম রাত কেটেছে বাগেরহাট উপকূলবাসীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
ঘূর্ণিঝড় আম্পান: নির্ঘুম রাত কেটেছে বাগেরহাট উপকূলবাসীর

বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলাবাসী। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে এক সঙ্গে থেকেছেন। 

এর মধ্যে ছিল বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা। যারা নিজ বাড়িতে ছিলেন তারাও ঝড় আতঙ্কে কাটিয়েছেন নির্ঘুম রাত।

 

এদিকে রাতভর আশ্রয়কেন্দ্র এসেছেন মানুষ। সকালেও আসছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার গবাদি পশুও নিয়ে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। সকাল ৯টা পর্যন্ত সরকারি হিসেবে বাগেরহাটের প্রায় এক লাখ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। ১৫ হাজার গবাদিপশুকেও আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে রাখা হয়েছে।  

বুধবার (২০ মে) সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে সবাই আরও বেশি আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের। বাগেরহাটের নদ-নদীতে দ্রুতগতিতে পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর আতঙ্ক বেড়েছে কয়েকগুন।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর পাড়ের বগী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বলেশ্বর নদীর পাড়ে আমাদের বসবাস। বন্যার খবর পেয়ে রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসি। সেখানে করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে ঠাসাঠাসি করে অবস্থান করছি। শুনেছি ঝড়ের ফলে ১০ ফুট পানি উঠবে। তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু সবকিছু ভেসে যাবে। কিছু থাকবে না।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ, কৃষক সামসুর রহমান, রুহুল আমিনসহ কয়েকজন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম সারারাত। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে কি ঘুমানো যায়। এর সঙ্গে রয়েছে বাড়ি-ঘরের চিন্তা। প্রায় সারারাতই একে অপরের সঙ্গে সিডরের ভয়াবহতা ও আম্পান কত ভয়ঙ্কর হবে সেই আলোচনা করে কাটিয়েছি। ঘুম থেকে উঠে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত শোনার পরে পরানে আর পানি নেই। এখন আল্লাহই আমাদের ভরসা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রত্যেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ মানুষ অবস্থান করছেন। অনেকেই নানা সমস্যার কারণে সেহরি খেতে পারেননি।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, রাতে শরণখোলার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র আমরা পরিদর্শন করেছি। আশ্রয় নেওয়া মানুষের খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় দুর্গত মানুষদের শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের খবরের পর থেকে জেলাব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।  

বুধবার (২০ মে) সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় এক লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দুর্গতদের জন্য কাজ করছে। প্রত্যেক উপজেলায় জরুরি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। জেলা সদর ও ৯টি উপজেলা মোট ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে মানুষের যানমালের কম ক্ষতি হয় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।