জানা গেছে, উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢল ও গত দুই দিনের ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ৭/৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ বালাপাড়া পাসাইটারী গ্রামে আজিজার রহমান বলেন, দুই দিন ধরে পানিবন্দি আছি। গত সপ্তাহেও একই অবস্থা হয়েছিল। কেউ খবর নেয়নি। তিস্তা নদী খুড়িয়া বাঁধ চাই। কেউ শুনে না। ভোটের সময় বাঁধ দিবার চেয়া মেম্বর, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী ভোট নিয়া চলি যায়। আর দেখা পাওয়া যায় না। হামরা মরি গেইলেও তারা খবর নেয় না বাহে।
তিস্তা নদীর তলদেশ খনন করে দুই তীরে বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধান দাবি করেন তিনি।
তিস্তার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জেগে ওঠা চরে বাদাম ও ভুট্টাসহ নানান জাতের সবজি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন চরাঞ্চলের মানুষ। অনেকেই গবাদি পশু পালন ও মাছ চাষ করেও সংসারের চাকা সচল রেখেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের চাষিদের উঠতি ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে যায়। ভেসে যায় শত শত পুকুরের মাছ। বিশেষ করে বাদাম ক্ষেতে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে চলমান বন্যায়। চরাঞ্চলের সব থেকে লাভবান ফসল বাদাম এ বছর বন্যায় ডুবে যাওয়ায় ঘরে তুলতে পারছেন না চাষিরা। কেউ কেউ পানিতে ডুবে ডুবে বাদাম সংগ্রহ করলেও তা পানি পাওয়ায় অঙ্কুরোদগম ঘটছে। ফলে চাষাবাদে খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কায় চাষিরা। ভুট্টা ক্ষেতেও একই অবস্থা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাতে অঙ্কুরোদগম ঘটছে।
এসব ভিজে যাওয়া ফসল সামান্য রোদে শুকানো নিয়েও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। পরিবারের সব সদস্য মিলে ভিজা ফসল উঁচু স্থানে নিয়ে শুকানোর কাজ করছেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সেটাও করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাষাবাদের খরচ আদায়সহ পরিবার পরিজনে খাবার নিয়েও চিন্তিত তিস্তা পাড়ের চাষিরা।
আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন সলেডি স্প্যার বাঁধ এলাকার চাষি সাদেকুল ইসলাম ৪ দোন জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। তার মধ্যে অর্ধেক জমির বাদাম ডুবে ডুবে সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু পানি পাওয়ায় তাতে অঙ্কুরোদগম ঘটেছে। বাজারে এ বাদামের চাহিদা থাকবে না। বাকি অর্ধেক বন্যার পানিতে ডুবে পলিমাটি জমে তলিয়ে গেছে। ফলে লোকসান দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৪ দোন জমিতে বাদাম আবাদ করেছি। অর্ধেক পলিমাটির নিচে তলিয়ে গেছে। সামান্য তুলে এনেছি। তা গাজ (অঙ্কুরোদগম) হয়েছে। গাজ উঠলে সে বাদাম কেউ নিবে না। এখন আবাদের খরচটাই পাবো না ভাই। রোদে শুকাতে পারলেও কিছুটা বাঁচানো যেত। সেটাও হচ্ছে না টানা বৃষ্টিতে। করোনার মাঝে এ দুর্যোগে এবার না খেয়ে মরতে হবে।
একই এলাকার বাদশা আলম জানান, পানিতে ডুবে ডুবে কষ্ট করে বাদাম সংগ্রহ করেও উপায় হচ্ছে না। টানা বৃষ্টির কারণে শুকানো সম্ভব হচ্ছে না বন্যার পানিতে ডুবে থাকা এসব বাদাম। ফলে দ্রুত অঙ্কুরোদগম ঘটছে। ক্ষেতে যা ডুবে আছে তা আবার পলি পড়ে মাটির নিচে ডুবে যাচ্ছে। ফলে বাদাম ঘরে তোলার স্বপ্ন এবার পূরণ হচ্ছে না। তার ৮০ শতাংশ জমির বাদাম ক্ষেত তিন দিন ধরে বন্যার পানিতে ডুবে আছে বলেও জানান তিনি।
তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৬টা থেকে এ পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১৮/২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিকেল ৩টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতেও বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির কোনো সম্ভবনা নেই।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ত্রাণ সহায়তা দরকার হলে আমরা পৌঁছে দেবো। ত্রাণ পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২০
আরএ