রাজশাহী: চোখের সামনে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে শামুকখোল। পাখির কিচিরমিচির ডাকে এখন মুখর হয়ে উঠেছে রোগ-শোকে ঢাকা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চারদিক।
এমন চোখজুড়ানো ছবি দেখে মন ভরে যাচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের। রামেক হাসপাতাল চত্বর এখন যেন পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
সকালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতলের চত্বরজুড়ে পাখির মেলা। হাসপাতালের ভেতরের গাছ-পালার চূড়ায় আশ্রয় নিয়েছে পাখিরা। এদের অধিকাংশই শামুক খোল, পানকৌড়ি ও নিশি বক প্রজাতির পাখি। রাত-দিন তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। পাখি-প্রকৃতি আর মানুষের কোলাহল যেন এখানে মিলে-মিশে একাকার।
তবে কেবল রামেক হাসপাতালই নয়, এখন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাস, ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস ও কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায়ও পাখিরা বাসা বেঁধেছে।
পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাখিগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রজনন করে আসছে। কিন্তু কারা-প্রাচীর নির্মাণের জন্য কয়েকটি বড় বড় গাছ কেটে ফেলায় এ বছর অনেক পাখি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এখন এসব পাখির প্রজননের সময়। তাই তারা দলবন্ধভাবে এসব এলাকায় বাসা তৈরি করছে।
বাংলাদেশ বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ফেডারেশনের সভাপতি ও পাখি বিশেষজ্ঞ এসএম ইকবাল বলেন, ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও রাজশাহী অঞ্চলে খুব বেশি সংখ্যক শামুক খোল চোখে পরতো না। কিন্তু, এখন অনেক পাখি এই এলাকায় দলবদ্ধভাবে বাস করছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও পর্যাপ্ত খাবারের উৎস থাকায় গত সাত থেকে আট বছর ধরে শামুক খোল পাখিরা এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে।
পাখি বিশেষজ্ঞ এসএম ইকবাল আরও বলেন, আগে শুধু জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এরা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রজনন করতে আসতো। তবে এখন এরা দেশের আবাসিক পাখি।
রাজশাহীর ‘সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফ’র প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান বলেন, শামুক খোল পাখিগুলো সাত থেকে আট বছর ধরেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রজনন করে আসছে। কিন্তু সেখানে কিছু গাছ কেটে ফেলায় এখন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর এলাকায় পাখিরা প্রজনন করছে। তবে এ বছর এখানে পাখির সংখ্যা বেশি।
এদিকে হাসপাতালে কর্মচারীরা জানান, পাখিগুলো এখানে বাসা বাঁধলেও তারা নিরাপদ নয়। হাসপাতালে কতিপয় স্টাফ ও কর্মচারীরা সবার অগোচরে এসব পাখি শিকার করে খাচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাসপাতালের বাইরে থেকে আসা উচ্ছৃংখল যুবকরাও এখান থেকে পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। তাই জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের স্বার্থে পাখিগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. নওশাদ আলী বলেন, রামেক ক্যাম্পাস চত্বরে পাখি শিকার করার মত কোনো পরিবেশ নেই। এখানে বন্দুক নিয়ে কারো প্রবেশ করার প্রশ্নই আসে না। তাহলে কিভাবে পাখি শিকার করছে সে বিষয়টি বোধগম্য নয়। এরপরও তারা বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন বলেও জানান কলেজ অধ্যক্ষ।
এছাড়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, পাখিদের সুরক্ষার বিষয়টি অবশ্যই তাদের মাথায় রয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এবং স্টাফদের প্রবেশমুখে আনসার সদস্যরা পাহারায় রয়েছে।
এছাড়া রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্স এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন হাসপাতাল উপ-পরিচালক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২০
এসএস/এএটি