ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তরের সেবায় খুশি শিল্প উদ্যোক্তারা

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তরের সেবায় খুশি শিল্প উদ্যোক্তারা বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তর

বাগেরহাট: প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে ছাড়পত্রের জন্য করণীয় সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের তাৎক্ষণিক নোটিশ দেয় বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তর। সেবা সহজীকরণ ও ভোগান্তি কমাতে এ বছরের আগস্ট থেকে বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তর এ পদ্ধতি চালু করেছে।

কোনো ভোগান্তি ও সুপারিশ ছাড়াই প্রাথমিক নোটিশ পেয়ে খুশি শিল্প উদ্যোক্তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তর, বাগেরহাট জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (১৯৯৫ সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী চারটি ক্যাটাগরিতে ছোট-বড় ২১৪ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে পেট্রোল পাম্প, ওয়েল্ডিং শপ, ফার্নিচার, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, বিসিক ও ইপিজেডে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠান, সিমেন্ট কারখানা, এলপিজি গ্যাস ফিলিং স্টেশন, পাওয়ার প্লান্ট, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রজেক্ট, বাণিজ্যিক (মুরগি ও গরুর) খামার, সমিল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টার, বেসরকারি হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য। তবে অনেক ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা জানেনই না অন্যসব দপ্তরের অনুমোদন ও নিবন্ধনের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নিতে হয়।

উদ্যোক্তাদের অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে অনেকেই পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে আগ্রহ দেখাতো না। কেউ কেউ আবার ছাড়পত্রের জন্য দালালদের দারস্থও হতেন। এসব বিড়ম্বনা দূর করতে পরিবেশ অধিদপ্তর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের এখতিয়ারভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নোটিশ দেন। নিজ প্রতিষ্ঠানে বসেই সরকারি দপ্তরের এমন সেবা পেয়ে খুশি উদ্যোক্তারা। নোটিশ পেয়ে উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ছাড়পত্র করিয়ে নিচ্ছেন ভোগান্তি ছাড়াই।

বাগেরহাট শহরের পাক সমিলের স্বত্বাধিকারী সরদার সাহেব আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি স’মিল করেছি। ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারি অনুমতি নিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিভাবে নিবো বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে একদিন পরিবেশ অধিদপ্তর, বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক স্যার আসলেন। পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য কি কি লাগবে তা বুঝিয়ে বললেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিলে কি ধরনের আইনী সমস্যা হবে তাও বললেন। সবশেষে আমার প্রতিষ্ঠানে বসেই পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আমাকে একটি নোটিশ দেয়। পরবর্তীকালে আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।

মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা বাজারের ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি জানতাম না ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমার ওয়ার্কশপে এসে আমাকে জানালেন এবং প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে বললেন। একটি নোটিশও দিলেন। আমি পরবর্তীকালে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অফিসে জমা দিয়েছে। এই পদ্ধতিতে আমার খুব উপকার হয়েছে। তা না হলে আমাকে জেল-জরিমানায় পড়তে হতো।

বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। গতানুগতিক নিয়ম অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে নোটিশ দিতাম। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার আগাম আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়া সরকারি নোটিশ পেয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়তেন। তারা সরাসরি আমাদের কাছে না এসে দালালদের কাছে যেতেন। আমরা দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে এবং সেবা সহজীকরণের জন্য আমরা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নোটিশ প্রদান পদ্ধতি চালু করি। এই পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত ২৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করেছি। উদ্যোক্তারাও ভালো সাড়া দিচ্ছেন আমাদের। সব উদ্যোক্তাদের পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য দালালদের কাছে না যেয়ে সরাসরি অফিসে আসার আহ্বান জানান তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে যা যা প্রয়োজন: নির্ধারিত ফরমে আবেদন। শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের সাধারণ তথ্যাবলি/ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি রিপোর্ট/প্রজেক্ট প্রোফাইল। কাঁচামালসহ উৎপন্ন দ্রব্যের প্রকৃত বিবরণ। ট্রেড লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনাপত্তিপত্র। হালনাগাদ আয়কর পরিশোধের প্রত্যয়নপত্র টাকার পরিমাণসহ টিন, ভ্যাট সার্টিফিকেট। লোকেশন ম্যাপ, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের লে-আউট প্ল্যান। উৎপন্ন দ্রব্যের প্রসেস ফ্লো ডায়াগ্রাম। দাগ, খতিয়ান উল্লেখপূর্বক পূর্ণাঙ্গ মৌজা ম্যাপ (প্রকল্পের প্রস্তাবিত স্থান চিহ্নিত করতে হবে)। জায়গার মালিকানা দলিল বা ভাড়া চুক্তিপত্র। বিনিয়োগ বোর্ডের নিবন্ধন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স। সব কাগজপত্র প্রদান সাপেক্ষে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে পরিবেশ ছাড়পত্র অর্জন করতে হবে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।