মৌলভীবাজার: সংরক্ষিত বনের নতুন আতঙ্ক মোটরসাইকেলের ক্লাসের তারের ফাঁদ। এই ফাঁদ বন্যপ্রাণী চলাচলের পথ অনুসরণ করে পাতছে এক শ্রেণির অসাধু শিকারি।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে চারটি এবং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১০টিসহ মোট ১৪টি এমন ফাঁদ শনাক্ত করে অপসারণ করেছেন একজন বন্যপ্রাণী গবেষক। ফাঁদগুলোর ব্যাপারে বনবিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বনের ভেতরে এমন ফাঁদ চিহ্নিত করে অপসারণ করতে যাচ্ছে স্থানীয় বনবিভাগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ও বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ বাংলানিউজকে বলেন, ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে মাংসভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওপর একটা গবেষণা প্রজেক্ট পরিচালনা করছি, সেটি হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এবং মৌভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা যেটা দেখালাম, মোটরবাইকের ক্লাসের তার দিয়ে তৈরি করা অনেকগুলো মরণফাঁদ বনের ভেতরে পাতা রয়েছে। পরে তথ্য নিয়ে জানলাম এটা করোনার সময় নাকি বেড়ে গেছে। মোটরবাইকের তারের ফাঁদ বা ফাঁসকে ইংরেজিতে ‘স্নেয়ার’ (Snare) বলে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪টি এবং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের তেলমাছড়া বিট থেকে ১০টি এমন মরণফাঁদ আমি পেয়েছি। সেগুলো উদ্ধার করে বনবিভাগের হাতে দিয়েছি।
ঢাবির ওই প্রভাষক আরও বলেন, বেদনার বিষয় হলো, সেই ফাঁদে আটকাপড়ে প্রায় ১০ কেজি ওজনের একটি বন্যশুকর কয়েকদিন আগেই মারা গেছে। সেটা মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। এই ফাঁদের বিরুদ্ধে বনবিভাগসহ আমাদের সবাইকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
পৃথিবীর অন্য দেশের যেমন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের ফরেস্টগুলোতে এই ‘স্নেয়ার’ এর ব্যবহার খুবই ভয়ংকর আকারে হয়ে থাকে। ওদের ফরেস্ট কিন্তু আমাদের চেয়ে অনেক গভীর। তবু সেখানে তাদের অনেক বন্যপ্রাণী নেই। কারণ, স্নেয়ার দিয়ে ওরা সব বন্যপ্রাণী ধরে ফেলেছে বলেও জানান বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি আমি জেনেছি। আমাদের দেশের মূল্যবান বন্যপ্রাণীদের অবৈধভাবে ধরার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ পন্থা। আমরা শিগশিগরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। প্যারালাল লাইন সার্চ পদ্ধতি মাধ্যমে দু’টি জাতীয় উদ্যানে ভালো করে অনুসন্ধান করা হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমাদের বনবিভাগের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় ভিলেজার্স (বনের অধিবাসী) এবং সিপিজি সদস্যরা প্যারালাল লাইন সার্চ কার্যক্রমে অংশ নেবেন। এটিকে বাংলায় সমান্তলারভাবে অনুসন্ধান করা বলে। বনের মধ্যে সমান দূরত্ব রেখে পুরো বনকে অনুসন্ধান করা। এর ফলে জালের মতো বনকে ছেঁকে ফেলা যায়।
যদি সেখানে কোনো ফাঁদ বা অন্য কোনো বন্যপ্রাণীদের আটকে ফেলার কোনো জিনিস থাকে সেগুলোও সেই প্যারালাল লাইন সার্চের মাধ্যমে ধরা পড়বে। যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
বিবিবি/এএ