ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব খুলনার বাজার

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১
নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব খুলনার বাজার

খুলনা: খুলনায় বিভিন্ন স্থানে গোপনে গড়ে তোলা হয়েছে নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা। আর এসব কারখানা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে পলিথিন ব্যাগ।

এমন এলাকা পাওয়া দুষ্কর যেখানে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নেই। এর ব্যবহার চলছে দেদারছে।

শহর কিংবা গ্রামের মধ্যে কোনো তফাত নেই, সব জায়গায় ক্রেতারা বাজার করতে যায় খালি হাতে। আর ফিরে আসে পলিথিনের ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন।

সবশেষ বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) খুলনা মহানগরীর হরিণটানা এলাকায় র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বিপণনের অপরাধে দু’টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রম্যমাণ আদালত।

অবৈধভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বিপণনের অপরাধে হরিণটানা থানাধীন জিরো পয়েন্ট এলাকার রবিউল হাসানকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং একই অপরাধে লবণচরা থানা এলাকার সাব্বির করিম প্রিন্সকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

র‌্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি খুলনার একটি আভিযানিক দল এবং ঢাকা সদর দপ্তরের আইন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে এ অর্থদণ্ড করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত অভিযান না থাকায় পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে গেছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে খুলনায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পলিথিন কারখানা। পিপি দানা থেকে রোল পলিথিন ও সেচ পাইপ প্রস্তুতের অনুমোদন নিয়ে কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছে। শর্ত ভঙ্গ করার কারণে বিগত বছরগুলোতে কয়েকটি কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।  

এখনো গোপনে মহানগরীর লবণচরা, সোনাডাঙ্গা, গোয়ালখালি ও জিরোপয়েন্ট এলাকায় পলিথিন ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খুলনার বড় বাজারেও রয়েছে বেশ কয়েকটি পাইকারি পলিথিনের দোকান। যারা ঢাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনে কার্টন ভরে পলিথিন আনে।

খুলনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদির দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানের পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে পলিথিন ব্যাগ দেদারছে ব্যবহার করছেন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে শাস্তির বিধান রেখে আইন করা হলেও কমেনি পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতির কথা চিন্তা করে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। তখন বিকল্প হিসেবে কাগজ ও পাটের ব্যাগের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীসময়ে আইনের প্রয়োগ না থাকায় পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েছে জ্যামিতিক হারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) খুলনার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, পলিথিন ব্যাগ বন্ধের আইন ও বিধিমালা রয়েছে। যারা এটা কার্যকর করবে তারা এটা করছে না। জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স পলিথিনের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের যানবাহনের অভাব, লোকবলের অভাবকে খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে নিয়মিত অভিযান চালায় না। যে কারণে প্রকাশ্যে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, মূল ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টিয়ে ভ্রম্যমাণভাবে পলিথিন উৎপাদন করছে। যে কারণে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন জায়গায় খুচরা বিক্রি করছে। সাইকেল, রিকশায় করে গোপনে গিয়ে পলিথিন বিক্রি করে।

তিনি আরও বলেন, খুলনা মহানগরীর হরিণটানা ও লবণচরা এলাকায় বুধবার র‌্যাব অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বিপণনের অপরাধে দু’টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২১
এমআরএম/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।