ঢাকা: বঙ্গোপসাগরের সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে রুপ নিয়েছে। সোমবার (২৪ মে) সকালে এটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে রূপ নেবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ওঠে যাচ্ছে ৫৫ কিমি পর্যন্ত।
আবহাওয়াবিদ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ঘণীভুত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিতে পারে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে এক নম্বর দুরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এই অবস্থায় গভীর সমুদ্র থেকে সকল মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
লঘুচাপটি নিম্নচাপের পর ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিলে এর নাম হবে ইয়াস (yaas)। এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ, যার ইংরেজি হচ্ছে জেসমিন। বাংলায় যাকে বলা হয় জুঁই ফুল। এই নামটি দিয়েছে ওমান।
আবহাওয়াবিদ মুহম্মদ আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকার লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। পরবর্তীতে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৬ মে ২০২১ নাগাদ উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে।
অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিস (আইএমডি) ও সাইক্লোন সেন্টার জানিয়েছে, রোববার (২৩ মে) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরের সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাচ্ছে ঘণ্টায় ৫৫ কিমি। ঘণ্টায় ৫ কিমি বেগে সামনের দিকে এগুচ্ছে।
গভীর নিম্নচাপটি সোমবার সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে রুপ নিলে কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ কিমি। ওইদিনই আরো শক্তি সঞ্চয় করলে গতি ওঠে যাবে ১০০ কিমিতে। মঙ্গলবার ১৭০ আর বুধবার উড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, খুলনা উপকূলে আসলে গতি দাঁড়াবে ১৮৫ কিমিতে। বুধবারই এটি অতি প্রবল ঝড় হিসেবে উপকূল অতিক্রম করে গতি হারাতে থাকবে।
বৃহস্পতিবার দুর্বল হয়ে ইয়াস নিম্নচাপে পরিণত হবে। এ সময় ১ থেকে ২ ফুট উচ্চতার সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে।
বিকেলে এটি ভারতের উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ থেকে ৫৭০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে, বালাসোর থেকে ৬৭০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬৫০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।
এদিকে রোববার বিকেলে নিম্নচাপের কেন্দ্র মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিমি দক্ষিণে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিমি দক্ষিণ, কক্সবাজার থেকে ৬২৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আইএমডি জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে উত্তর-দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদাহ, দিনাজপুর, শিলিগুড়ি, দিনাজপুর, সিকিম, দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসও মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ার কথা জানিয়েছে।
২০২০ সালের মে মাসে একই দিক থেকে হানা দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। তবে সেটি পশ্চিমবঙ্গসহ দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে গেলেও বাংলাদেশে ঢোকে শক্তি হারিয়ে।
সাগরপৃষ্ঠ গরম হলে বাতাস হালকা হয়ে উপরে ওঠে যায়। ফলে একটি বায়ু শূন্যতার সৃষ্টি হয় সাগরের উপরিতলে। এতে যে চাপ বা ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়, তাকে লঘুচাপ বলা হয়। সেটা আরো শক্তি সঞ্চয় করলে প্রথমে নিম্নচাপ, আরো শক্তি সঞ্চয় করলে ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২১
ইইউড/এমএইচএম