ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন ও প্রকৃতি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২১
তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন ও প্রকৃতি তৃষ্ণা মেটাতে আইসক্রিম খাচ্ছে বানর। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: বৃষ্টিহীন সীমান্ত অঞ্চল সিলেটকে তপ্ত করে তুলেছে গরম। সবুজ সমারোহের বৃত্তে থাকা সিলেট যেনো আগুনে পুড়ছে।

বাইরে বেরোলে করোনার ভয়। বিদ্যুৎহীন ঘরেও যেন টেকা দায়। এমন অবস্থায় গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তারপরও শ্রমজীবী মানুষকে জীবিকার তাগিদে বাইরে বেরোতে হয়েছে। খানিকটা প্রশান্তির খোঁজে গরম থেকে রেহাই পেতে গাছের ছায়া ছিল শ্রমজীবীদের আশ্রয়। কিন্তু শহরের ছায়াবৃক্ষগুলোও উন্নয়নের বলি হয়েছে সেই কবে। শিশু কিশোররা দলবেঁধে পানিতে দীর্ঘক্ষণ গোসল করছে। এছাড়া তীব্র গরমে প্রাণিকূলেও অতিষ্ঠ। এমনকি বানরও তৃষ্ণা মেঠাতে ছুটে এসেছে মানুষের সান্নিধ্যে।

বৃষ্টি বাদলের দিনে মে মাসে এত গরম! যা বিগত দেড় দশকের রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিস। রোববার (২৩ মে) সিলেটে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবারও (২৪ মে) দুপুর ১টার দিকে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিস। বিশেষ করে মে মাসে বৃষ্টি না থাকা এবং সাগরে নিম্নচাপের কারণে গরমের তীব্রতা বেশি বেড়েছে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। সেসঙ্গে গাছপালা নিধনে কমেছে বৃষ্টিপাত।

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত ১৫ বছরের মধ্যে মে মাসে সিলেটে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রোববার ও সোমবারে । ২০০৬ সালে মে মাসে ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভূত হয়। এরপর মে মাসে ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা কখনো অনুভূত হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দুইদিন ধরে সাগরে নিম্নচাপের অত্যাধিক তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া মে মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু মে মাসেই ৫৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। সেখানে এ যাবত বিচ্ছিন্নভাবে মাত্র ২৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ‍শুধু মে মাস নয়, গত ৬ মাসে সিলেটে ৬০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া এবার উজানেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেটে হাওরাঞ্চলে মানুষ ঠিকমতো ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। তবে, বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল ভালো হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ডিসেম্বরে বৃষ্টি হয়নি। এবারের জানুয়ারিতে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয় ৯ মিলিমিটার। ফেব্রুয়ারি ছিল বৃষ্টিহীন। মার্চে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ বৃষ্টি হওয়ার কথা ১৫৫ মিলিমিটার। এপ্রিলে ৩৭৬ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪২ মিলিমিটার। মে মাসে ৫৭০ মিলিমিটারের স্থলে ২৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ গত বছরের মে মাসেই ৬৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল বলেও নিশ্চিত করেন আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী।

তার মতে, দু’দিন ধরে গরমের তীব্রতা বেড়েছে সাগরে নিম্নচাপের কারণে। সাইক্লোনস্থলের বর্তমান প্রেসার ৯৬৮ মিলিবার। বায়ুর চাপ সে সময় সিলেটে ৯৯৯ মিলিবার। ভূমি থেকে ৩৩ ফুট উঁচুতে উঠলে বাতাসের আদ্রতা ১ মিলিবার কম মিলবে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই গরমের উৎপত্তি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সব জায়গার জলীয়বাষ্প শোষণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রাও বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, সাইক্লেনের ঘূর্ণয়নের কারণে বায়ুমণ্ডলের প্রেসার কমে যায়। সাইক্লোন আদ্রতা শুষে নেয়। আকাশে মেঘের ঘনঘটা থাকলেও সেগুলোকে ঘূর্ণিঝড় শুষে নেয়। ফলে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। তাছাড়া প্রি-মৌসুমে এবার প্রায় ৬০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল ভারতের চেরাপুঞ্জি। অন্য বছর এ সময়ে ওই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও এবার সেখানেও বৃষ্টিপাত না হওয়ার রেকর্ড ভাঙছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, সিলেটে বেশি তাপদাহ হয়ে থাকে এপ্রিল ও আগস্টে। এবার পুরো ব্যতিক্রম। বৃষ্টির বদলে মে মাসে তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন ও প্রকৃতি। অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির বাংলাদেশ থেকে সরে ভারতের দিকে যাচ্ছে। ফলে ২৪ মে রাতে এবং ২৯ ও ৩০ মে নাগাদ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।