ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: মাছ রক্ষায় বাগেরহাটের মৎস্যচাষিদের শেষ চেষ্টা

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২১
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: মাছ রক্ষায় বাগেরহাটের মৎস্যচাষিদের শেষ চেষ্টা ঘের রক্ষার চেষ্টা। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস থেকে মাছ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন মৎস্যচাষিরা। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে উপকূলীয় চাষিরা এখন ঘেরের পাড়ে।

কেউ মাঠ থেকে মাটি কেটে ঘেরের বাঁধ উচু করছেন, কেউবা নেট দিচ্ছেন। ঘেরের পাটা ঠিক করছেন।  

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছ্বাস থেকে ঘেরের মাছ ঠেকাতে যে যার মতো করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইয়াস যত ঘনিয়ে আসছে মৎস্যচাষিদের শঙ্কাও তত বাড়ছে।  

মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা এভাবেই কাজ করেছেন নিজেদের ঘের রক্ষায়।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা এলাকার মাছ চাষি মহিদুল ইসলাম বলেন, টিভির খবরে শুনেছি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে অনেক পানি হবে। তাই শুনে ঘেরের পাড় সংস্কার ও উঁচু করার জন্য মাটি দিচ্ছি। মাছ এমন এক প্রাণি যে ঘেরের কোথাও কোনো ছোট ছিদ্র বা পানি যাওয়া আসা করলেও সব মাছ বের হয়ে যাবে। ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সময় মাছ আরও বেশি চঞ্চল হয়ে যায়।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ইউনূস আলী বলেন, যখনই কোনো বড় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয় তখনই একবারে ঘের তলিয়ে যায়। তাই এবার আগে আগে নেট দিচ্ছি। যেসব জায়গায় নিচু রয়েছে সেখানে মাটি দিচ্ছি। এখন আল্লাহ ভরসা।

রামপাল উপজেলার সোনাতুনিয়া এলাকার রবিউল ব্যাপারি বলেন, রাতে বৃষ্টি হয়েছে। নদী-খালের পানিও বেড়েছে। এখন যদি জোরে বাতাস এবং পানির চাপ বেশি হয় তাহলে ঘেরের কাতি (বাঁধ) ভেঙে যেতে পারে। তারপরও ঘেরে অবস্থান করছি যতটুকু সামাল দেওয়া যায়।

একই এলাকার সাবুল মোল্লা বলেন, বুলবুল, আম্পানের পর এবার আসছে ইয়াস। প্রতিটি ঝড়েই আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘেরে এখন মাছ ধরার সময়। এ সময়ে যদি ইয়াসের আঘাতে ঘের তলিয়ে যায় তবে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষদের পথে বসতে হবে।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, প্রত্যেকটি দুর্যোগেই বাগেরহাটের মৎস্যচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি হিসেবে এসব ক্ষতির পরিমাণ কম বলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কখনও ক্ষতিপূরণ বা তেমন কোনো সুবিধাও পায় না, চাষিদের দীর্ঘদিনের দাবি ঘেরগুলোকে যদি বীমার আওতায় আনা যায় তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ইয়াসের ফলে আসন্ন জলোচ্ছ্বাসে যাতে মাছগুলোকে রক্ষা করা যায় এজন্য জেলার চিংড়ি চাষিরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া দেখা ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকবে না।

বাগেরহাট জেলায় ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। চাষি রয়েছেন লক্ষাধিক।
গেল বছর ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলার ১৭শ হেক্টর ফসলি জমির পাশাপাশি সাড়ে চার হাজারের বেশি চিংড়ির ঘের পানিতে ভেসে যায়। যাতে চাষিদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বুধবার দুপুর নাগাদ সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে উপকূলে।  ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ধেয়ে আসার খবরে উৎকণ্ঠিত সময় পার করছেন বাগেরহাট জেলার বেশিরভাগ মৎস্যচাষিরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।