ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

কুড়িগ্রামে বন্যার অবনতি, তীব্র হয়েছে ভাঙন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
কুড়িগ্রামে বন্যার অবনতি, তীব্র হয়েছে ভাঙন ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও ৮৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গ্রামীণ কাঁচারাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এবং বাড়ির চারদিকে পানি ওঠায় নৌকা বা কলাগাছের ভেলাই এখন যোগাযোগের একমাত্র ভরসা।  

এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদ-নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শনিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ধরলাার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলায় ১০ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রে ৯ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি মানুষদের নানা দুর্ভোগকে সঙ্গী করে চলতে হচ্ছে। চারিদিকে পানি ওঠায় বন্যা কবলিতরা গবাদিপশু নিয়ে স্থানীয় ওয়াপদা বাঁধ বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে গোখাদ্য সঙ্কট।

ধরলা অববাহিকার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, নদীতে পানি বাড়ায় আমন ক্ষেত, পটল ক্ষেত তলিয়ে রয়েছে। ফলে গরু-ছাগলকে কলাপাতা আর বাঁশপাতা খাওয়াচ্ছেন। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।

তিস্তার পানি হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াসাম, বুড়িরহাট, তৈয়বখাঁ, খেতাবখাঁ, ঠুটা পাইকর এবং উলিপুর উপজেলার গোড়াই পিয়ার, দালালপাড়া, হোকডাঙ্গা, ডাক্তার পাড়া, অর্জুনসহ বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী কোনো প্রকল্প না থাকায় নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় কবলিত এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে পাউবো জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে।  

এদিকে প্রতিবছর নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় তিস্তা অববাহিকায় সরকারের মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ গ্রামের কামাল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ি তিস্তার ভাঙনের মুখে। পাউবো বালুর বস্তা ফেলায় আপাতত রক্ষা পেলেও তা কতক্ষণ টিকবে তা নিয়ে চিন্তিত। যে হারে তিস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে হারাতে হতে পারে যে কোনো সময়। আমরা চাই তিস্তার ভাঙন রোধে সরকারের মেগা প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মন্জুরুল হক জানান, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত ও ৮৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে কিছু ফসল রক্ষা পাবে। আর দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতি কিছুটা বেশি হবে।

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, উজানে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় আশাকরছি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরলা ও তিস্তার পানি কমতে শুরু করবে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও আরও দুইদিন পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তিনি আরও জানান, তিস্তা অববাহিকার উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে তিস্তার কোনো প্রকল্প চলমান না থাকলেও জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ডাম্পিং করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে বড় ভাঙন রয়েছে সেখানে কাজ করার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা করছি তিস্তা নিয়ে যে মেগা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে তা দ্রুতই শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
এফইএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।