মৌলভীবাজার: বাঙালির চোখ সব সময় বড় মাছের দিকে। যে কেউ স্বাভাবিকভাবে বড় মাছকেই বেছে নেন।
আবার মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জলাশয় যদি উন্মুক্ত হয়, অবাধ ও অবারিত হয় তবে ছোট মাছের স্বাদবৈচিত্র্য অনেকখানি বেড়ে যায় বলে দাবি মৎস্য বিশেষজ্ঞের।
উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলসহ পার্শ্ববর্তী জলাশয়গুলো আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। নানা জাতের দেশীয় প্রজাতির মাছ বহুকাল ধরে এসব জলাশয়কে সমৃদ্ধ করে রেখেছে। তাই মৎস্যপ্রেমীদের বেশি পছন্দ বাইক্কা বিল সংলগ্ন জলাশয়ের মাছ। এখানকার খলিসা, কৈ, টাকি প্রভৃতি মাছ উন্মুক্ত জলাশয়ের কারণেই অনেক বেশি সুস্বাদু।
‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’ এ স্লোগান নিয়ে গত ২৮ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী চলছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২১, যা শেষ হবে আগামী ০৩ সেপ্টেম্বর। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় মৎস্যচাষ বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা ও নানা দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারাজুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ সুস্বাদু হয় পরিবেশগত কারণে। মাছ যখন উন্মুক্ত জলাশয়ে থাকে তখন বিভিন্ন গুণাগুণসমৃদ্ধ খাবার খায়। সেখানকার পানিও তুলনামূলক ভালো। ফলে মাছের স্বাদ বেড়ে যায়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য মাছের শরীরে যেসব খাবার প্রয়োজন তার সবক’টি উন্মুক্ত জলাশয়ে পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, ফিসারিজ বা হ্যাচারির মাছ একটা জলাশয়ে আটকা থাকে। তারা দিনের পর দিন একইরকম খাবার খায়। তাই তাদের স্বাদ উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের তুলনায় অনেক কম। আবার, উন্মুক্ত জলাশয়ে এসব অসুবিধাও নেই। মাছ পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। এজন্য শুধু স্বাদ নয়, মাছের শারীরিক রঙেও পার্থক্য চলে আসে।
এক কথায় বলা যায়— পানির গুণাগুণ, প্রাকৃতিক খাবার আর উন্নত আবাসের কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ ভিন্ন হয়। বড় থেকে ছোট মাছে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেন ফারাজুল কবির।
বাইক্কা ও প্রাকৃতিক বিল সম্পর্কে উপজেলার এই সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের উন্মুক্ত জলাশয়ের দেশীয় মাছ রক্ষা করতে হবে। এছাড়া হাওর বা বিলে অপরিকল্পিতভাবে ফিসারি খনন প্রতিরোধ, বিল সেচে মাছ ধরা ও অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা, দেশীয় মাছের উৎপাদন ও বংশবৃদ্ধির জন্য প্রজনন মৌসুমে হাওরে দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগ জানায়, শ্রীমঙ্গলে মাছের চাহিদা রয়েছে ৭ হাজার ৫৪৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে উৎপাদন হয় ৯ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২১
বিবিবি/এসআরএস