ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে উপকূল জুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২১
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে উপকূল জুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত ...

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট জুড়ে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। রোববার (০৫ ডিসেম্বর) ভোর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে মৃদু বাতাস অব্যাহত রয়েছে।

বিকেল পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি বাগেরহাটে।  

সময় যত যাচ্ছে আবহাওয়া তত খারাপের দিকে যাচ্ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে গুমোট আকাশের কারণে উপকূলের মানুষের মাঝে ঝড়ের আতঙ্ক বিরাজ করছে। শীত ও বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ঝড়ের খবরে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে থাকা নৌযানগুলো উপকূলে আসতে শুরু করেছে। কেউ কেউ সুন্দরবনের মধ্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তবে মোংলা সমুদ্রবন্দরের সব কাজ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. শাহাদাত হোসেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ আঘাত হানলে করণীয় বিষয়ে জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।  

তিনি বলেন, সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরুরি সভা করে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এর প্রভাব মোকাবিলায় সর্তক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকার ভ্যানচালক মো. শাহজামাল বলেন, বৃষ্টি ও শীতের কারণে সকাল থেকে ভ্যান চালাতে পারেনি। বিকেল হয়ে গেছে এক পয়সাও রোজগার নাই। রাতে কি নিয়ে বাড়ি যাব। জাওয়াদের কথা শোনার পর থেকে আতঙ্কে আছি, কখন জানি কি হয়ে যায়।  

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ওসমান আলী বলেন, তিন চার দিন আগে ঘের সেচেছি মাছ ধরার জন্য। মাছ ধরা শেষে নতুন করে ঘের প্রস্তুতের কাজ করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সকাল থেকে বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

ঝড়ের খবরে বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরা জেলে ইউনুস আলী বলেন, ঝড়ের খবর শুনে দ্রুত ট্রলার চালিয়ে সকালে লোকালয়ে চলে এসেছি। অন্যান্য জেলেরাও লোকালয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ কেউ আগেও এসেছে।

ভৈরব নদীর পারে বসবাসকারী রওশনারা বেগম নামে এক নারী বলেন, এমনিতেই আমরা নদীর কাছাকাছি বসাবস করি। বন্যা আসতেছে শুনে আমরা আতঙ্কিত। আকাশে মেঘ তারপর বৃষ্টি। এই ঝড় বন্যা থেকে আল্লাহ আমাগো রেহাই দেও’।  

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরের সব কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। জাহাজ আসছে, যাচ্ছে। পণ্য বোঝাই ও খালাস হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়’ জাওয়াদের খবর পাওয়ার পর থেকে আমরা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করছি। তবে ঘূর্ণিঝড়টি গতি পরিবর্তন করে উত্তর দিকে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি নিম্মচাপে রূপ নিয়েছে। তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। ‘জাওয়াদ’ যদি গতি পরিবর্তন করে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর যদি সিগনাল বাড়ায় তখন মোংলা বন্দরের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, গভীর নিম্নচাপটি মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলার ও জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ০৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।