সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১৪০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমোদন (লাইসেন্স) রয়েছে মাত্র ১৮টির।
এছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৪৬টির। অথচ ১৩০/১৩৫টি ভাটায় অবাধে চলছে ইট পোড়ানো। ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক অঞ্চলে স্থাপনের কারণে পরিবেশের ছাড়পত্র পায়নি অধিকাংশ ভাটা। পরিবেশের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই দাপটের সঙ্গে চলছে এসব ইটভাটা।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতেই ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৬টি ভাটা রয়েছে রায়গঞ্জ উপজেলাতেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উল্লাপাড়ায় ৩৮টি এবং সর্বনিম্ন ১টি ভাটা রয়েছে বেলকুচিতে। এর মধ্যে ২০২০-২০২১ অর্থ বছর পর্যন্ত ইট পোড়ানোর লাইসেন্স রয়েছে ১৮টি ভাটার।
অপরদিকে লাইসেন্স থাকলেও নবায়ন নেই ৫৯ ভাটার। কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ৬৩ ভাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের (বগুড়া) তথ্য মতে জানা যায়, সিরাজগঞ্জে ৪৬টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ৮৮টি ভাটা। বাকি ৬টি ইটভাটার তথ্য নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে।
জেলা সর্বাধিক ভাটা রায়গঞ্জ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শস্যভাণ্ডার খ্যাত এ অঞ্চলটিতে বেপরোয়াভাবে স্থাপন করা হয়েছে ভাটা। ফসলি জমি নষ্ট করে কিংবা আবাসিক অঞ্চলে স্থাপন করা ভাটার কারণে আশপাশের পরিবেশও চরমভাবে বিনষ্ট করছে। এ উপজেলায় ৬৬টি ভাটায় ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চললেও ৩৬টির কোনো লাইসেন্সই নেই। বাকি ৩০টির লাইসেন্স থাকলেও ২০১৭ সালের পর তা নবায়ন করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ অবৈধভাবেই চলছে এসব ভাটা। এ উপজেলার মাত্র ১৬টি ভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে, ৪৬টির কোনো ছাড়পত্র নেই। আবার বাকি ৪টি ভাটার তথ্য নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে।
শাহজাদপুরের ১৫ ভাটার মধ্যে ৪টির কোনো লাইসেন্স নেই। আর লাইসেন্সের মেয়াদ নেই বাকি ১১টির। তাড়াশে ৫, কাজিপুরে ৩টি ও বেলকুচিতে ১টি ভাটা থাকলেও এর কোনোটিরই লাইসেন্স নেই। এর মধ্যে তাড়াশের ১টির পরিবেশের ছাড়পত্র থাকলেও বাকিগুলোর কোনো ছাড়পত্র নেই।
উল্লাপাড়া উপজেলার মোট ৩৮ ভাটার মধ্যে ১৮টি ভাটা সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে। বাকি ২০টির মধ্যে ৮টির লাইসেন্স নেই এবং ১২টির মেয়াদোত্তীর্ণ।
সিরাজগঞ্জ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলেন, এর আগে ইটভাটা স্থাপনে বেশ কিছু সরকারি বিধি-নিষেধ ছিল। এর মধ্যে এলজিইডির সড়ক দিয়ে ইটবাহী ট্রাক চলাচল করতে পারবে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা আবাসিক এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ভাটাগুলোর ছাড়পত্র দেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় জেলা প্রশাসকও অনুমোদন দেননি। সম্প্রতি সরকার বেশ কিছু বিধি-নিষেধ শিথিল করেছে। আগামী বছরের মধ্যে সবগুলো ভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র পাবে এবং জেলা প্রশাসনের অনুমোদনও পাবে।
জানতে চাইলে রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত জাহান বলেন, আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ ভাটার মালিকদের জরিমানা করি। তাদের পরিবেশের ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র আপডেট করার জন্য পরামর্শও দিই।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের (বগুড়া) পরিচালক সুফিয়া নাজিম বলেন, ছাড়পত্রহীন ভাটার তালিকা আমরা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরই মধ্যে আমাদের একটি নির্দেশনা এসেছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন বলেন, অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে খুব শিগগিরই আমাদের অভিযান শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
এসআই