ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

‘ঘর-বাড়ি তলাইয়া গেছে, নৌকা ছাড়া আশ্রয়ের কোনো জায়গা নাই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
‘ঘর-বাড়ি তলাইয়া গেছে, নৌকা ছাড়া আশ্রয়ের কোনো জায়গা নাই’ নৌকায় খড়ি তুলছেন ময়না বেগম। ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: ‘ঘর-বাড়ি তলাইয়া গেছে, ছোট নৌকা ছাড়া আশ্রয়ের কোনো জায়গা নাই। কোনোমতে খুঁটির সঙ্গে নৌকা বাইন্ধা আছি।

যে হারে পানি বাড়তাছে তাতে ঘরের চাল ডুইবা গেলে এখানেও থাকা যাইবো না। রান্দি কই খাই কী। এই দুর্যোগের মাঝে কুনহানে যাই। ’

সরেজমিনে শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বন্যা কবলিত বাসিন্দা ময়না বেগম তার বাড়ির উঠানের গলা পানিতে দাঁড়িয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। আকস্মিক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর। ব্রহ্মপুত্র নদের ভেতরের পোড়ার চরের দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ ময়না বেগম। ঘরের ভেতর ও উঠান গলা পানিতে তলিয়ে থাকায় জরুরি জিনিসপত্রসহ জ্বালানি খড়ি তুলছে নৌকায়। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, তাই পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক।

আজ বিকেলে ধরলা নদী পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার অববাহিকার ছয়টি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের প্লাবিত এলাকায়। সেখানে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়ে তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে কমপক্ষে দুই হাজার পরিবারের বসত ঘরে পানি প্রবেশ করায় তারা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বাংলানিউজকে জানান, জেলা পর্যায়ে ২০ লাখ টাকা ৪শ মেট্রিক টন খাবার মজুদ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে দুটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। রৌমারী উপজেলায় ৮ শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময় ১৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
এফইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।