ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৫ সে.মি. ওপরে

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৫ সে.মি. ওপরে

বরগুনা: দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, ভারী বর্ষণ ও পূর্ণিমার প্রভাবে রোববার (১৪ আগস্ট) বিষখালী নদীর পাথরঘাটা স্টেশনে গতকালের তুলনায় ২৫ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে মোট ১২৫ সে.মি. বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর মধ্যে রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুরে পাথরঘাটায় বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপরে ও বরগুনা বিষখালী নদীর পানি ৭২ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৫ মিলিমিটার।

এদিন সকালে বরগুনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে জোয়ারের পানি বাড়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে বসত-বাড়ি। পৌর শহর ছাড়াও তলিয়ে গেছে আমতলী-পুরাকাটা ও বড়ইতলা-বাইনচটকি ফেরীর গ্যাংওয়ে। এতে গাড়ি নিয়ে পার হতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বেড়িবাঁধের বাইরের ও চরের স্থায়ী বাসিন্দাদের বাড়িঘর ফসলি জমি, পানের বরজ, মাছের ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জেলায় অন্তত দশটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তীর রক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ভেঙে যেতে পারে বলে আতঙ্কে আছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাথরঘাটা উপজেলার পানি পরিমাপক খাইরুল ইসলাম ও সদর উপজেলার মাহাতাব হোসেন জানিয়েছেন, এটি এ মৌসুমের সর্বোচ্চ জোয়ার। রোববার বরগুনায় বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং পাথরঘাটায় ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ৫১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

অপরদিকে শনিবার (১৩ আগস্ট) বরগুনায় বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার এবং পাথরঘাটায় ১০০ সেন্টিমিটার বা ১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) থেকে বরগুনার প্রধান তিন নদীতে (পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর) জোয়ারের পানি বেড়েছে। বুধবার (১০ আগস্ট) বরগুনায় বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপরে ও পাথরঘাটার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বরগুনায় বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও পাথরঘাটা উপজেলায় ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে শুক্রবারের (১২ আগস্ট) তথ্য পাওয়া যায়নি।

বরগুনা জেলা পুলিশের এক পুলিশ সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, টানা বৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে রাস্তা, দোকানপাট। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্লাবিত হয়েছে পৌর শহরের কলেজ রোড, ডিকেপি রোড, ফার্মেসি পট্টি, কসমেটিক্স পট্টি, থানা সড়ক, শহরের পশু হাসপাতাল সড়ক, গার্মেন্টস পট্টিসহ চরকলনী এলাকা।

পৌরসভার পশু হাসপাতাল সড়ক এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, জোয়ারের পানিতে আমাদের মুরগি ও মাছের খাবার নষ্ট হয়েছে।

পাথরঘাটার কাকচিরা এলাকার স্কুল শিক্ষক হেমায়েত আলি বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা ৬ দিন ধরে বরগুনার নদ-নদীর পানি বেড়ে যায় কারণে আমাদের ঘরের ভেতর পানি ঢুকছে। রান্নার কোনো উপায় নেই। আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী কয়েক এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলার পানি পরিমাপক খাইরুল ইসলাম মুঠোফোনে বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ বিষখালী নদীর পাথরঘাটা অংশের পানি বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে পাথরঘাটার দক্ষিণের এলাকাগুলো তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশের ফলে কৃষকের আমনের বীজতলা, ফসলি জমি, পানের বরজ, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এই এলাকার মানুষের কোটি টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) রেডিও অপারেটর গোলাম মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বরগুনায় বৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভারী বৃষ্টি, পূর্ণিমা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিষখালী নদীর পানির উচ্চতা গত কয়েকদিন ধরে বেশি রয়েছে। নদীর পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি হ্রাস না পাওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।