বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে হালকা এবং মাঝারি ধরনের দমকা হাওয়া রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালীর আব্বাস তালুকদার বলেন, রোববার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই বৃষ্টি রাতে মুষলধারায় নেমেছে। এখনও নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের সময় কি হবে জানিনা।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহর বুনিয়া এলাকার হাফিজুর রহমান বলেন, সিত্রাং যদি সিডরের মত রূপ নেয়, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব। নদীবেষ্টিত আমাদের এই ইউনিয়নকে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য কোনো বাঁধও নেই। জলোচ্ছ্বাস হলে অনেক জানমালের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
শুধু আব্বাস ও হাফিজুর নয়, বাগেরহাটের বেশির ভাগ এলাকার মানুষের শঙ্কা এটি। তবে সিত্রাং মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়ন কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ২৯৮ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে সাবধান থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলার স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর ও বিভিন্ন নদ-নদীতে থাকা নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ঝুঁকির মধ্যে থাকা বাসিন্দাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। যদি ঘূর্ণিঝড় আমাদের এলাকায় আঘাত হানে তাহলে তাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র অথবা কোস্টগার্ডের বেজ ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ রূপ নিয়েছে। ক্রমশ এটির শক্তি বাড়ছে। ফলে সব মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে মাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
আরএ