ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

চরফলকন তথ্যসেবা কেন্দ্র সম্প্রসারিত হচ্ছে

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৪
চরফলকন তথ্যসেবা কেন্দ্র সম্প্রসারিত হচ্ছে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চরফলকন, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর ঘুরে এসে :  প্রান্তিক জনপদে বহুমুখী বাধা পেরিয়ে চরফলকন ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র এখন প্রসারিত হচ্ছে। এক বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এই কেন্দ্রের সেবা চালু হওয়ার পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরে আরও একটি কেন্দ্র স্থাপন করতে হয়েছে।



তরুণদের মাঝে বাড়ছে আগ্রহ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহণ থেকে শুরু করে তারা যুক্ত হচ্ছে নানামুখী কর্মকাণ্ডে। কেন্দ্রের দুটো শাখায়ই বিভিন্নস্তরের মানুষজন আসছেন তথ্য জানতে। কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে।

ঠিক এক বছর আগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে চরফলকন গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের তথ্যসেবা কেন্দ্র ঘুরে উৎস্যুক মানুষের ভিড় দেখেছে বাংলানিউজ। রাতেও মানুষ সেখানে যায় তথ্যের সন্ধানে। বিদেশে অবস্থানরত স্বজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একবছর পর সেখানে এই ধরণের সেবা গ্রহীতার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আর চাহিদার নিরিখে তথ্যসেবা কেন্দ্রের আরও একটি শাখা খুলতে হয়েছে উপজেলা শহরে।

তথ্যসেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের জীবন সহজ করে দেয়। জীবনকে আরও গতিশীল করে। সেবার ধরণও বদলে গেছে। সাধারণ মানুষ এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে। আর তাই সেবা কেন্দ্রে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। পরিষদের সেবাকে এখন আমরা বলছি ডিজিটাল সেবা। অফিস বন্ধ থাকলেও সেবা থেমে থাকবে না। ’

চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের দ্বিতীয় শাখাটি খোলা হয়েছে কমলনগর উপজেলা সদর হাজীরহাটে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমলনগর কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার এন্ড চর ফলকন ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ৩ ও ৬ মাস মেয়াদি স্বল্পমেয়াদি বেসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। প্রশিক্ষণ ছাড়া অন্যান্য সেবাও যথারীতি পাওয়া যাবে এই কেন্দ্র থেকে। গ্রামের তথ্য কেন্দ্রে যেতে সমস্যা হলে এখান থেকেই ইউনিয়নের বাসিন্দারা সব ধরণের সেবা পাবেন।

তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘মানুষের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নতুন কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেকে ছেলেমেয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠবে। প্রত্যেক ব্যাচে ৩০জন করে অংশগ্রহণকারী থাকবেন। চলতি অক্টোবর থেকে প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ’

তথ্যসেবা কেন্দ্র সম্পর্কে মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা বাড়ানোর কৌশল সম্পর্কে উদ্যোক্তা বলেন, ‘কেন্দ্রের কার্যক্রমের বিষয়ে ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। পরিষদের চেয়ারম্যান নিজেও বিভিন্নভাবে ক্যাম্পেইন করেছেন। পোস্টার-লিফলেট দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অনেক কাজ অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকে বাধ্য হয়েই তথ্যসেবা কেন্দ্রে আসেন। ’

চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের দোতলার একটি কক্ষে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু হয় ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর। পুরোমাত্রায় কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে। নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের উদ্যোগে প্রত্যন্ত এই গ্রামকে ইন্টারনেটের মাধমে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ইন্টারনেট সেবা নেয়ার জন্য যে মানুষগুলো একদিন দূরের শহরে যেতেন, তারা এখন সেসব কাজ করতে পারেন এখানে এসে।

সূত্র বলছে, পিছিয়ে থাকা এই গ্রামে বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামবাসীকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। খবরাখবর জানা থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনে এই কেন্দ্র মানুষকে সহায়তা করছে। সংবাদ জানতে মানুষজন এখানে আসেন। খবরাখবর ছাড়াও তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে কৃষকদের জন্য এখানে কৃষি পরামর্শ দেয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরীক্ষার সময়সূচি, পরীক্ষার ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্য জানায় তথ্য কেন্দ্র। চাকরিজীবীদের জন্য চাকরির খবর ছাড়াও এখানে নানা ধরণের বাণিজ্যিক সেবাও রয়েছে। কেন্দ্রটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দ্বিতীয় শাখাটিও একই সময়সূচি অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।

তথ্যকেন্দ্রে আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় এলাকার তরুণ-যুবকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। কেন্দ্রে এসে ফেইসবুক একাউন্ট করে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে তারা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এই খাতের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নিয়মিত কেন্দ্রে আসছে অনেকে। কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আরিফুর রহমানসহ গ্রামের কিছু যুবক বিষয়টিকে দেখছে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে। কেন্দ্রটি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এনেছে। ভিডিও কলের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ বহু দূরে বা বিদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন।

গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, এক সময় আমরা অন্ধকারে ছিলাম। ঢাকায় কী হচ্ছে কিছুই জানতে পারতাম না। এখন জানতে পারি। রাজনৈতিক উত্তাপ কিংবা অন্য কোন কারণে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া খবরেই এখন ভরসা। ইন্টারনেটের কল্যাণে গোটা বিশ্বের সঙ্গে সার্বক্ষণিকই সংযুক্ত থাকছে প্রত্যন্তের এই চরফলকন।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা আর বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন বহু ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র সামনের দিকে এগোতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন থেমে নেই চরফলকন। এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল যুগের সঙ্গে সমান তালে। মিলেছে সাফল্যের স্বীকৃতিও।  
 
[ পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোন খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: [email protected] ]

বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।