বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ উপকূলীয় জেলেদের জীবিকা চলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার করে। উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এসব জেলের দুর্দশার তাই অন্ত নেই।
উপকূলের জেলে পল্লী ঘুরে: বিদেশি ট্রলার আতঙ্কে দিশেহারা উপকূলের জেলেরা। বঙ্গোপসাগরে প্রতিদিন ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে রূপালী ইলিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ। এসব বিদেশি জেলেরা শুধু মাছ লুট করেই খান্ত হচ্ছে না, আমাদের জেলেদেরই ফিশিং করতে দিচ্ছে না আমাদের জল সীমানায়।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার উপকূলের নদ-নদীতে আট মাস (নভেম্বর থেকে জুন) জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকে। পুরো সময়টা জুড়ে বাংলাদেশের জেলেরা ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকে। এসময় ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা বাংলাদেশের সীমানাসহ পুরো বঙ্গোপসাগর জুড়ে ইলিশ শিকারের মহোউৎসব শুরু করে। কিন্তু যখন বাংলাদেশে মৎস্য শিকারের মৌসুম শুরু হয় তখনও ভারতের জেলেরা এ দেশের সীমানায় দাপিয়ে বেড়ায়।
আর বাংলাদেশের জেলেরা মৎস্য শিকারে গেলে ভারতের ট্রলারের জেলেসহ বিদেশি ট্রলারের জেলেরা এদেশের জেলেদের মাছ ধরতে দেয় না। আবার কখনো সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে বা ভুল করে অন্যদেশের জলসীমায় ঢুকলে বন্দি হয়ে বিদেশি কারাগারে কারাবাস করতে হয়। অনেক সময় ট্রলারও ভেঙে দেয় তারা। এছাড়াও ট্রলারের ইঞ্জিন, সার্চ লাইট ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নিয়ে যায় বিদেশি ট্রলারের জেলেরা।
জেলেরা জানান, বিদেশি ট্রলারগুলোতে ওয়ারলেস থাকে যাতে দ্রুত তারা একত্রিত হতে পারে। আমাদের কোনো ট্রলার দেখলেই ওরা ওয়ারলেসের মাধ্যমে অন্য ট্রলারগুলোকে খবর দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আর নিরুপায় হয়ে ওদের নির্যাতন সহ্য করতে হয় আমাদের। কেননা গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের জেলেরা বিছিন্ন হয়ে থাকে। তাদের একত্রিত হওয়ার থাকে না কোনো উপায়। অনেক সময় আমাদের জেলেদের ধরে ওদের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। আর কোনো অপরাধ না করেই ভোগ করতে হয় সাজা। অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই নেমে আসে বর্বর নির্যাতন।
বরগুনা সদর উপজেলার বড়ইতলা গ্রামের জেলে ফোরকান বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি ট্রলার এখন আমাদের জন্য আতঙ্ক। দেখলেই বুকের মধ্যে ভয় হয়। একে দস্যু তারপর বিদেশি ট্রলার আতঙ্ক সব মিলিয়ে দিশেহারা উপকূলের জেলেরা।
একই স্থানের জেলে ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে ওদের ভয়ে আমরা ঠিক মতো মাছ ধরতে পারি না। অনেক সময় ওরা মহিপুর পর্যন্ত এসে মাছ শিকার করে। কিছু বলার ভাষা থাকে না আমাদের। এমনকি আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীও ওদের কাছে কিছু না। একত্রে এক দেড়শো ট্রলার চলা ফেরা করে ওরা।
মিয়ানমার ও ভারতের কাছ থেকে সমুদ্র বিজয়ের পরও বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদেশি জেলেরা। জেলেদের নিরাপত্তায় এখনো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ কেন নেয়নি সরকার এর উত্তর খুঁজে পায় না উপকূলের জেলেরা। তাইতো সমুদ্রে বিদেশি ট্রলারের হাত থেকে রক্ষার দাবি উপকূলের জেলেদের।
এবিষয়ে বরগুনা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি খালেক দফাদার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জেলেরা ভুল করে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে যদি কোনো কারণে ভারত বা মায়ানমারের সীমানায় পরে তবে ওই দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের নীরিহ জেলেদের ধরে নিয়ে অবৈধ প্রবেশের দায়ে শাস্তি দিয়ে থাকে। কিন্তু ওরা আমাদের সীমানার মধ্যে ঢুকে ইলিশ শিকার করলে আমরা কিছু বলতে পারি না কেননা আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে থাকে না।
পাথরঘাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরি বাংলানিউজকে বলেন, ওদের অত্যাচারে উপকূলের জেলেরা দিশেহারা। বিদেশি ট্রলারের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করলেও কোনো ফল পাইনি।
কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশন কমান্ডার লে. এফ এ রউফ বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি জেলেদের আমাদের সীমানার মধ্যে পেলে আমরা তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে গভীর সমুদ্রে ও চট্টগ্রামে নৌবাহিনী বিদেশি ট্রলার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। গভীর সমুদ্রে নৌবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৫
এসএইচ
** গভীর সমুদ্রে মেলে না প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস
** দস্যুদের কার্ডেও নেই জীবনের নিশ্চয়তা
** দস্যু ভয় তবু যেতে হয়
** ঋণ-দাদনে দিশেহারা জীবন
উপকূল থেকে উপকূল
উপকূলের জেলে জীবন-৫
বিদেশি ট্রলার আতঙ্ক!
সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।