শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে: ‘গ্রামে যাচ্ছ, একজন ‘কাজের মেয়ে’ নিয়ে এসো। ছেলে হলেও চলবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, সকাল হলেই দলবেঁধে স্কুলে যায় ছেলে-মেয়েরা। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল ছাড়াও আছে আনন্দ স্কুল। নির্দিষ্ট সময়ে জমজমাট সে স্কুলগুলো। শিক্ষক শিক্ষিকারা ব্যস্ত নানা ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সামলাতে।
তারা জানালেন, উপবৃত্তি চালুসহ সরকারের নানা চেষ্টায় স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় শতভাগ। আগে বাড়তি আয়ের জন্য অনেকে ছেলে-মেয়েকে কাজে পাঠাতেন। কিন্তু সেদিন বদলেছে। শিক্ষার্থী প্রতি সরকারের আর্থিক সহায়তা বেড়েছে। অভিভাবকরাও হয়েছেন সচেতন। যে কারণে কষ্ট করে হলেও তারা সন্তানদের শিক্ষিত করতে চান। পরবর্তী প্রজন্মকে তারা আর অন্ধকারে রাখতে চান না।
শ্যামনগর কৈখালী ইউনিয়নের শৈলখালী গ্রামের আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা খুকুমনি বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামের মানুষও এখন শিক্ষার মর্ম অনুধাবন করতে পারেন। তারা অশিক্ষিত হলেও সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চান। তাছাড়া সরকার বিনা খরচে পড়ালেখার ব্যবস্থা করছে। তাই ‘গ্রামেই কাজের লোক পাওয়া যায়’ শহুরেদের এমন ধারণা এখন সত্যিই অমূলক।
৬০ নম্বর পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দরিদ্রতার কারণেই এসব অঞ্চলের অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েকে স্কুলের বদলে কাজ করতে পাঠাতেন। এখন দেশে অভাবও আগের মতো নেই। আর সরকারের সহায়তাও যথেষ্ট। যে কারণে কাজের মানুষ খুঁজতে গ্রামে আসা এখন বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
জানা যায়, প্রতিটি শিক্ষার্থী মাসে একশো টাকা উপবৃত্তি পায়। প্রতি তিনমাস পর পর সে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন স্কুলের টিফিন হিসেবে এক প্যাকেট করে বিস্কুটও দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
এতো গেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা। আবার আনন্দ স্কুলগুলোতে আলাদা স্কুল ড্রেস ও বই বিতরণের পাশাপাশি প্রতি ছয়মাস পরপর ৪শ ৮০ টাকা করে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
সুরাইয়া নওশীন নামের এক অভিভাবক খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামের গরিব মানুষগুলোর কাছে শিক্ষা একসময় বিলাসিতা ছিলো। কিন্তু সরকার এখন বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সঙ্গে উপবৃত্তির মতো বিষয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাছাড়া সবাই এখন নিজের সন্তানকে যোগ্য দেখতে চায়।
জয়াখালি গ্রামের দিনমজুর আবু ইছাক বলেন, পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রথম দুই মেয়েকে শহরে কাজের জন্যি পাঠাইছিলাম। তারা মূর্খই থেকে গেছে। কিন্তু আর সে ভুল করতি রাজি না। এখন বাকি তিন ছেলেমেয়ে স্কুলি যাচ্ছে। নিজির অনেক কষ্ট হয়, তবুও চাই ওরা পড়ালেখা শিখে মানুষ হোক। আমি যে কষ্ট ভোগ করিছি, তারা যেন সেডা টেরও না পায়।
আবদুল হাকিম ও রওশন আরা আমে আরেক দম্পতিকে পাওয়া যায় যাদবপুর গ্রামে। দিনমজুর হলেও তাদের চার মেয়ের দু’জন কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে। দু’জন চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
মেয়েদের বিষয়ে রওশন আরা বলেন, অন্যের বাড়িতি দিনমজুরি কইরে মেয়েদের খাবার যোগাড় করিছি। সেই খাবার খেইয়ে তারা পরীক্ষা দিতে যায়। তবু তাদের অন্যের বাড়িতি কাজে পাঠাইনি। আল্লাহ তাদের মেধা দিয়ে পাঠাইছে। আমার কোনো সঞ্চয় নেই। এই মেয়েরাই আমার সঞ্চয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
জেপি/এএ
** ওই যায় হেলিকপ্টার...
** ‘চাঁদের আলোয়’ রাসযাত্রা শুরু
** বন বিভাগের অনুমতি নিতেই রাত পার