ভোলা: জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভোলায় নদীভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত চার দশকে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর অর্ধশতাধিক বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বাস্তুহারা হয়েছেন লাখো মানুষ।
প্রতি বছর অব্যাহত নদীভাঙনের কারণে দীর্ঘ এ সময়ে কমে গেছে ভোলার আয়তন। এতে হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী জনপদের বাসিন্দারা।
![](files/December2015/December01/Bh_1_368448103.jpg)
এদিকে, নদীভাঙন রোধে এলাকাবাসীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সামান্য কিছু কাজ করলেও তাতে বন্ধ হচ্ছে না ভাঙন। ফলে একের পর এক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সমগ্র উপকূল।
দেশের বৃহত্তম দ্বীপজেলা ভোলাকে তাই ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার দাবি আতঙ্কিত জনপদের মানুষের।
![](files/December2015/December02/BH_4_143128479.jpg)
সংশ্লিষ্ট নানা সূত্র অনুযায়ী, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব, অপরিকল্পিত বাঁধ, ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা না নেওয়া ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে বর্তমানে ভোলা সদর, চরফ্যাশন, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিন পয়েন্টে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর তীব্র ভাঙন চলছে। এ ভাঙন ভোলাবাসীকে শঙ্কিত করে তুলছে।
ভোলা স্বার্থ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অমিতাভ অপু বলেন, সত্তরের দশক থেকে ভাঙন শুরু হলেও আশির দশকে তা অনেক কমে আসে। কিন্তু বর্তমানে ভাঙনের মাত্রা বাড়ছে।
![](files/December2015/December02/Bh_3_447585849.jpg)
তিনি বলেন, নদী ও সাগর মোহনায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। এই লবণ পানি ও অতি জোয়ার উপকূলে আঘাত করলে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। দিন দিন এ ভাঙনের গতি বেড়ে যাওয়ায় ভোলাবাসী হুমকির মুখে রয়েছে। তাই জলবায়ুর প্রভাব থেকে বাঁচতে এখনই সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের (৬৫) বলেন, ১৯৭০ থেকেই তেতুলিয়ার ভাঙন শুরু হয়। এতে এখন পর্যন্ত চারটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধ হচ্ছে না।
ভোলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বাহাউদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা নিয়ে কথা হলেও এর থেকে উত্তরণে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই স্থায়ী গবেষণার মাধ্যমে ভোলাকে রক্ষা করতে হবে।
![](files/December2015/December02/Bh_2_772006963.jpg)
পাউবোর হিসাব অনুযায়ী, গত চার দশকে ৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। সেইসঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ওইসব এলাকার বসত-ভিটা, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা, হাট-বাজারসহ নানা স্থাপনা। এতে করে মানচিত্রে ছোট হয়ে আসছে ভোলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভোলার উপকূলীয় জনপদ।
ভোলা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ভোলায় নদীভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। তাই মানচিত্র থেকে দিন-দিন ভোলা ছোট হয়ে আসছে।
![](files/December2015/December02/BH5_815063770.jpg)
পাউবো ডিভিশন-২ চরফ্যাশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহে আলম ও মনপুরার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে মনপুরা ও চরফ্যাশন ভাঙনের কবলে পড়ছে। বেশি ভাঙন হচ্ছে মাদাজ এবং চর ফয়েজউদ্দিন পয়েন্টে।
নদীভাঙন ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গ্যাস সমৃদ্ধ দেশের দ্বীপজেলা ভোলাকে রক্ষার দাবি এ অঞ্চলের মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এসআর/এএসআর