খুলনার পাইকগাছা থেকে ফিরে: ‘বড় বৌ, মেজ বৌ, সেজ বৌ মিলে/ ঘুঁটে দেয় ঘরের পাঁচিলে। ’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের এ দু’টি লাইনের যথার্থতা মিলেছে খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নে।
ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের গৃহবধূরা পরিমাপ মতো পাটখড়ি, বাঁশের কঞ্চি অথবা গাছের চিকন ডাল কেটে গোবর ও তুষ একসঙ্গে মিশিয়ে ওই লাঠির সঙ্গে লাগিয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ গোবর ঘেঁটে গোল তাল পাকিয়ে সেগুলো হাতের সাহায্যে ঘরের চালে চ্যাপ্টা করে রোদে দিচ্ছেন।
ইউনিয়নের অনেক গৃহবধূই গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। শুধু আর্থিক সচ্ছলতাই নয়, পরিবারের রোজকার জ্বালানি সঙ্কটও মেটাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি অতিরিক্ত পচা গোবর জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের খরচ কমিয়ে জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন।
এর সত্যতা মিললো নোলির চক গ্রামের শিউলি রানী বিশ্বাসের কথায়, আমাগে (আমাদের) এহানের (এখানের) সগোলেই (সবাই) ঘুঁটে বানায়। আর এ ঘুঁটে কিনতি বাড়িতি ব্যাপারি আসে। বৌ-ঝিরা এই ঘুঁটে বেইচা অনেকের বাচ্চা-কাচ্চার লেহাপড়ার খরচ যোগায়। সমিতির কিস্তি দেয়।
হরিণখোলা গ্রামের গৌরি রানী জানান, তার গোয়ালে ৬টি গরু রয়েছে। এসব গরুর গোবর সারাবছর বড় একটি গর্তে জমানো হয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে জমানো গোবর দিয়ে তিনি ঘুঁটে বানানো শুরু করেন। এরপর নিজেদের জ্বালানি সঙ্কট মিটিয়ে প্রতি ১০০টি ঘুঁটে পাইকারদের কাছে ২শ থেকে ২শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
একই গামের অমূল্য মন্ডল জানান, গোবরের ঘুঁটে বিক্রি করে এলাকার বেকার মহিলা ও গৃহবধূরা পরিবারের উন্নতি করছে। তারও ৬টি গরু রয়েছে। গোবর দিয়ে একদিকে যেমন জ্বালানির চাহিদা মেটানো যায়, অন্যদিকে মাটিতে পচিয়ে জৈবসার তৈরি করে পাওয়া যায় অধিক ফলন।
পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সমরেশ হালদার বলেন, দেলুটিতে কোনো চিংড়ি ঘের নেই, এ কারণে প্রায় সব বাড়িতেই গরু পোষা হয়। জ্বালানির বিকল্প হিসাবে নারীরা গোবর দিয়ে লাকড়ি বা মুইঠা (ঘুঁটে) তৈরি করেন। এতে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অস্বচ্ছল পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের অনেক স্বচ্ছল পরিবারও রয়েছেন যারা গবাদি পশুপালন করে একদিকে জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছেন, অন্যদিকে ঘুঁটে বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
এমআরএম/এসএস