ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

কার্ড মিলেছে, চাল মেলেনি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৬
কার্ড মিলেছে, চাল মেলেনি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

উপকূলীয় জেলেপল্লি ঘুরে: কার্ড পেয়েছি কিন্তু চাল পাইনি। যারা মাছ ধরে তারা চাল পায় না, চাল পায় অন্যরা।

সরকার আমাগো লইগ্যা চাল দেয়, সেই চাল আমাদের ভাগ্যে জোটে না, তাহলে এই কার্ড দিয়া কি করমু। আমরা চাল পামু কবে?

অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন জেলে রফিকের স্ত্রী মুক্তা আক্তার।  

ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের বাঁধে আশ্রিত মুক্তা জানান, তার স্বামী জেলে হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বছরখানেক আগে, কিন্তু একবারও চাল পাননি, তাহলে চাল পায় কারা? 

এ অভিযোগ জেলে তৈয়ব আলীরও। তিনি বলেন, এক বছর ধরে যত্ন কইরা কার্ড রাখছি, চাল আনতে গেছি। কিন্তু তারা কয়, চালের তালিকায় তোমার নাম নেই। অথচ যার কার্ড নাই, তারা চাল পাচ্ছে।

জেলে পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফের চাল না পাওয়ার এমন অভিযোগ শুধু রফিকের স্ত্রী মুক্তা কিংবা তৈয়বের নয়, এমন অভিযোগ আরও অনেক জেলের।  

জেলেদের আরও অভিযোগ, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাদের পছন্দের লোকদের নাম দেয়, অসহায় জেলেদের নাম দেয় না।

ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের গঙ্গাকীর্তি, কালীকীর্তি, কানাইনগর, স্লউজঘাট ও দক্ষিণ ধনিয়া এলাকায় বাস করে হাজারো জেলে। বাঁধের উপর রয়েছে জেলেপল্লি। মেঘনার তীর ঘেঁষা বিপন্ন জনপদে এসব মানুষের বসবাস হলেও নেই নিজস্ব কোনো ঠিকানা। বাঁধের উপর অন্যের জমি ভাড়া করে থাকেন তারা।  

নদীর মাছের উপর নির্ভর করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। বাপ-দাদার পেশাকে ধরে রেখেছেন তারা। এদের মধ্যে কেউ ২০/৩০ বছর ধরে মাছ শিকার করলেও জেলে হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি, অনেকে কার্ড পেয়েছেন কিন্তু চাল পাচ্ছেন না।

জেলেপল্লির আলমগীর হোসেনের ছেলে সাহাবুদ্দিন বলেন, কার্ড রয়েছে কিন্তু চাল পাচ্ছি না, চাল আনতে গেলে তারা চাল দেয় না।
 
একই অভিযোগ, জাফর, সিডু, লিটন,  শাহিন, হারুন, মোস্তফা, শাহে আলমসহ অনেকের।

গঙ্গাকীর্তি গ্রামের জেলে লিটন বলেন, ৩০ বছর ধরে মাছ শিকার করে আসছি, কিন্তু আজও জেলে হিসেবে পরিচয়পত্র পাইনি। কবে মিলবে স্বীকৃতি!

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জেলে পরিবারের দুঃখ দুর্দশার কথা। তারা জানান নানা সংকটের কথা। ক্ষতিগ্রস্তদ হলেও তালিকায় তাদের নাম ওঠে না, মেলেনি কোনো সরকারি সাহায্য। মহাজনের দাদন আর এনজিও’র ঋণ নিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।  

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যান্ত চার মাসে প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে জোটেনি সব কার্ডধারী জেলের ভাগ্যে। ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য সরকার এ চাল বরাদ্দ দেয়।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এক লাখ ২১০ জন। যাদের মধ্যে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৪৯৭জনকে। এখনও প্রক্রিয়ায় রয়েছে প্রায় ৭ হাজার কার্ড। কিন্তু জেলে প‍ুনর্বাসনের জন্য সরকার থেকে চাল এসেছে মাত্র ৫২ হাজার জেলের জন্য, তাই সবাইকে চাল দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়টি আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ আসেনি।

চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নামের তালিকা দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতরণ কমিটির সভাপতি, তাই অনিয়ম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।