সম্মিলিত চাষাবাদে এভাবেই ভাগ্য গড়ছেন বরগুনার উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার নারীরা।
এক সময় এ অঞ্চলের মানুষেরা শুধু মাছ ধরা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন, কৃষিতে তাদের মনোযোগ ছিল একেবারেই কম।
বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষা বিষখালী ও বলেশ্বর নদী সংলগ্ন পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রাম। দুর্যোগপ্রবণ এলাকাটিতে প্রতিনিয়ত আঘাত হানে বিভিন্ন মাত্রার সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেগুলো এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলায় প্রতিটি সংসারে সারা বছরই লেগে থাকে অভাব-অনটন।
অভাবের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে ২৫ জন নারীকে নিয়ে গড়া হয়েছে ‘সুন্দরবন নারী দল’। দলটির নেতৃত্বে আছেন পাখি বেগম। কৃষিতে যে নারীরাও সমান ভাবে পুরুষের মতোই কাজ করতে পারেন, তারই জ্বলন্ত উদাহরণ রুহিতার সুন্দরবন নারী দল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২৫ জন নারী নিজেদের চাষ করা পাকা ধান লাইনে দাঁড়িয়ে কাটছেন। কেউ কারো চেয়ে কম নন, সমান অংশে ভাগ হয়ে পাল্লা দিয়ে ধান ঘরে তুলছেন তারা। অন্য কোনো শ্রমিকের সাহায্য ছাড়া সব কাজ নিজেরাই করছেন।
পাখিদের দেখাদেখি আরও অনেক নারীই তাদের কাছে এসে পরামর্শ নিয়ে ফসলের মাঠে নেমে পড়েছেন। আরও ৫টি নারী দলও সাড়ে ৩ একর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে এলাকায় আলোড়ন তুলেছেন।
উপজেলার পাথরঘাটা সদর ও চরদুয়ানী ইউনিয়নে ৮টি গ্রামে অ্যাকশন এইডের সহযোগিতায় ‘সহিংসতা প্রতিরোধমূলক কাজে নারীকে সম্পৃক্তকরণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সুশীলন। এর আওতায় ২০১১ সালের জুন মাসে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামের ওই ২৫ জন নারীকে নিয়ে সুন্দরবন নারী দল গঠিত হয়।
কৃষিকাজে নারীর অংশীদারিত্বসহ নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ নেন দলের নারীরা। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে সার-বীজ দেয় সুশীলন। সেগুলো নিয়ে দলের সদস্যরা রুহিতা মাঠে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করে প্রথম বছরেই ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়। কাজে উৎসাহ দেখে নিজেদের ৪০ হাজার টাকা ও নারী দলের সদস্যদের সঞ্চয়কৃত ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ৮২ শতাংশ কৃষিজমি ৩ বছরের মেয়াদে চুক্তিতে বন্দোবস্ত নেয় অ্যাকশনএইড ও সুশীলন। চলতি বছর বন্ধক নেওয়া আরও ৬৬ শতাংশ জমিসহ মোট ১ একর ৪৮ শতাংশ জমিতে লবণাক্ততা সহনশীল জাতের ইরি ধানের চাষ করেছেন নারী চাষিরা।
সুন্দরবন নারী দলের সভানেত্রী পাখি বেগম বলেন, ‘সংসারে আমরা নিজেরাই স্বাবলম্বী। এখন আর স্বামীর কাছে হাত পেতে থাকতে হয় না। লাভের টাকা ব্যাংকে জমা রাখি আর কিছু টাকা মাঝে-মধ্যে সংসারেও খরচ করি’।
পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল বলেন, ‘নারীদের এমন উদ্যোগ দেখে সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে কৃষিকাজে এগিয়ে আসছেন এখানকার নারী কৃষকেরা। দেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন তারাও’।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এএসআর