ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জীবন-জীবিকা

খড়ের ঘরে আমেনার জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২০
খড়ের ঘরে আমেনার জীবন

বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ উপকূলীয় বাসিন্দাদের জীবন চলে অতি কষ্টে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগের সঙ্গে তাদের বসবাস। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে উপকূলবাসী। আবার অনেকের ভিটেমাটি না থাকায় সরকারি জমিতে থাকেন। এখানকার গুটি কয়েক বিত্তশালীরা দালানে থাকলেও অধিকাংশ বাসিন্দারাই টিনের আর খড়ের ঘরে বসাবস করছেন। এতেই তাদের শান্তি। তাই শুধু ঘূর্ণিঝড় নয় অল্প বাতাসেই ঘর ভেঙে যায়। উপকূলবাসীর অন্তহীন দুর্দশা এবং জীবন-জীবিকার চিত্র নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা করেসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম খোকনের প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্ব।

উপকূলের প্রান্তিক জনপদ ঘুরে এসে: ‘খড়কূটার এক বাসা বাঁধলাম, বাবুই পাখির মত, এই হৃদয়ের ভালোবাসা দিলাম আছে যত, একটা ময়না পাখি সেই বাসায় পুষি কত ভালোবাসায়, তারে চোখে চোখে রাখি’ গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা ও শিল্পী মনির খানের কণ্ঠে এই গানটির কথার সঙ্গে আমেনার জীবনের যেন মিল রয়েছে। চার পাশে চাচের বেড়া, উপরে খড়ের চাল আর মেঝেতে মাটির প্রলেপ।

একমাত্র মেয়েকে নিয়ে স্বামীহারা আমেনার এখানেই বসবাস।  

একটা সময় গ্রামের পর গ্রাম খড়ের ঘর দেখা যেত। মাটির দেয়াল, ওপরে খড়ের চাল। এখন তা ইতিহাস হয়ে গেছে। এ যুগের প্রজন্মরা মাটির বা খড়ের ঘরের গল্প শুনলে বিশ্বাসই করবে না। তবে প্রান্তিক জনপদে এখনো বিশ্বাস করার মতো মাটি আর খড়ের ঘর চোখে পড়ে। আমেনা সেই খড়ের ঘরেই বসবাস করেন।  

এ যেন আমেনার রাজ্য। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও শীত দুটোই যেন তার জন্য কাল, তবে আমেনার মতে দালানকোঠা আর অট্টালিকা হার মেনেছে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া খড়ের ঘরের কাছে।  

পাথরঘাটা উপকূলীয় উপজেলার সদর পাথরঘাটা ইউনিয়নের প্রান্তিক জনপদের রুহিতা গ্রাম। যেখানের ৯৫ ভাগ মানুষই মাছ শিকারের কাজে নিয়োজিত। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে আমেনার মতো অসংখ্য বাসিন্দা। স্বামী হাতেম আলী মারা গেছেন ৫ বছর আগে। স্বামীর যতটুকু জমি ছিল তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমেনার মায়ের রেখে যাওয়া ১৭ কাঠা জমিতেই একমাত্র মেয়ে হনুফাকে নিয়ে বসবাস করছেন খড়ের ঘরে। ভিক্ষা আর অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান তিনি। কিন্তু বর্তমান করোনার কারণে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পারছেন না। মানবেতর জীবন যাপন করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে যে সহযোগিতা পেয়েছে তা দিয়েই চলছে।  

আমেন ও তার মেয়ে হনুফা।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিনে রুহিতা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আমেনার ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘর। ঘরের দু’পাশে চাটাইয়ের বেড়া, এক পাশে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো আর উপরে খড়ের চাল। মাঝেমধ্যে পুরাতন কাপড় দিয়ে ছাউনি। চাটাইয়ের বেড়ার একাধিক জায়গা ছিদ্র। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়।  

কথা হয় আমেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বামী মারা গেছেন ৫ বছর আগে। একমাত্র মেয়ে হনুফাকে নিয়ে দিনযাপন করেন তিনি। অতি কষ্টেই তাদের জীবন চলে। মেয়ে হনুফা ৮ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।  

আমেনা আরও বলেন, স্বামীর যা জমি ছিল নদীতে গ্যাছে, মায়ের দেওয়া জমিতে থাকি। অন্যের বাড়িতে কাম কইরা খাই, মাঝেমধ্যে কাম না পাইলে খয়রাত (ভিক্ষা) কইরা দিন চলে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমেনার জীবন যাপনের খবর আপনার কাছে শুনে ইতোমধ্যেই খোঁজ খবর নিয়েছি। আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে ‘জমি আছে ঘর নাই’ সরকারের প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। তাছাড়া ইতোমধ্যেই কিছু সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এর আগেও বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরে ‘হালিমন বিবির আলিশান বাড়ি’ শিরোনামে একটি মানবিক স্টোরি প্রকাশ হওয়ায় তাৎক্ষণিক হালিমনকে ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের তালিকায় আনা হয়েছে। তাছাড়া তাকে ঘর দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তার কোনো জমি নেই এ কারণে আইনগত ঝামেলা থাকায় বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।