বিহঙ্গদ্বীপ সংলগ্ন রুহিতা গ্রাম ঘুরেঃ বিশ্বঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদ।
সরেজমিন রুহিতা গ্রামে গিয়ে সিডরের ভয়াবহতার কিছু চিত্র পাওয়া যায়। এ গ্রামে সিডরের সময় অসংখ্য মানুষ মারা গেছেন, আজও পাওয়া যায়নি অনেকের লাশ। আবার অনেক জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। আবার অনেকেই সিডরের সঙ্গে যুদ্ধ করে একরকম বেঁচে আছেন।
উপকূলের জীবন-জীবিকা নিয়ে বাংলানিউজের ধারাবাহিক প্রতিবেদন এর অংশ হিসেবে প্রান্তিক জনপদে প্রান্তিকের অন্তহীন দুর্দশা এবং জীবন-জীবিকার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা হয় সিডরের সময় ৪ বছরের এক যোদ্ধার সঙ্গে। নাম তার বেল্লাল হোসেন। রুহিতা গ্রামের আব্দুল গফফার হাওলাদার আর জয়নব বেগমের একমাত্র ছেলে। এখন বয়স ১৭ বছর। ৪ বছরের সময় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর বয়ে যায় এ অঞ্চলের উপর দিয়ে। তখন কিছুই বুঝতে পারেনি বেল্লাল। পৃথিবীর আলো বাতাস আবারও দেখবে এমনটাও ভাবেনি। সন্ধ্যার আগে রুহিতার চরে ছাগল আনতে গিয়ে সিডরের জোয়ারের কবলে পরে সে। মুহূর্তের মধ্যেই পানিতে ভেসে যায় কয়েক কিলোমিটার দূরে। কিছুক্ষণ পর একটি তাল গাছ পেয়ে সেটি আগলে ধরে জীবন রক্ষা করে।
বেল্লাল হোসেন বলে, সন্ধ্যা হওয়ার আগে আব্বায় চরে (নদীর পাড়ে) ছাগল আইনতে কইলে মুই ছাগল আনতে যাই। হের পরই পানি আইয়া মোরে ভাসাইয়া নিয়া যায়। হেরপর একটা তালগাছ পাইছি, আর কিছুই কইতে পারি না। সকালে দেহি তাল গাছের মাথায় ডেগার উপরে বসা।
সেই স্মৃতি মনে পরে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে বেল্লাল বলে, সব সময়ই মনে পরে। এই পৃথিবী দেখতে পারমু কিনা এডা মনেও হরিনাই। প্রায় সময় ওই তালগাছের দিকে তাকাই, মাঝে মধ্যে তাল গাছের গোড়ায় যাইয়া বই (বসি)।
প্রতিবেশী প্রবীণ এবং প্রতক্ষ্যদর্শী আবদুল হক বলেন, বেল্লাল আমার প্রতিবেশী। সিডরের পরদিন আমার ঘর ভেঙে যায়, অনেক ক্ষতি হয়। তারপর বেল্লালকে যখন ওর বাবা-মা খোঁজাখুজি করে তখন আমি তার খোঁজ করতে শুরু করি। খোঁজ করতে গিয়ে অনেক নারী, পুরুষ ও শিশুর লাশ দেখি কিন্তু বেল্লালের খোঁজ মেলেনি। কয়েক ঘণ্টা পর তাল গাছের মাথায় বেল্লালের কান্না শুনতে পেয়ে ওরে নামাই।
বেল্লালের মা জয়নব বেগম বলেন, বেল্লাল আমাদের একমাত্র সন্তান। সিডরের দিন সন্ধ্যায় ওর বাবা ছাগল আনতে পাঠালেও আর ফিরে আসেনি। পরদিন তাল গাছের মাথায় ওরে খুঁইজা পাই।
তিনিও আরও বলেন, বেল্লালকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াইতে পারছি। টাকার অভাবে লেখাপড়া করাতে পারছিনা। এখন সাগরে গিয়া মাছ ধরে।
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ এবং বেড়িবাঁধের বাইরে ও ভেতরের বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই দূর্যোগ মোকাবিলা করে। তারপরেও এখানেই তাদের বসবাস। বেল্লালের মতো অসংখ্য শিশু-কিশোর পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। লড়াই করে বেঁচে থেকেই জীবনের জন্য জীবিকার কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২০
আরএ