ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

নজর কাড়লো হাতিয়ায় নাগরিক উদ্যোগ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
নজর কাড়লো হাতিয়ায় নাগরিক উদ্যোগ নাগরিক উদ্যোগের কারণে সুরক্ষিত হাতিয়ার নলছিরা ঘাট। ছবি: বাংলানিউজ

- ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর রক্ষা কর্মসূচি
- সরকারি বরাদ্দ নয়,পুরো টাকা নাগরিকদের
- ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যে ৬শ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং
- আরও ১শ মিটারের কাজ বাকি
- স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে নাগরিকরা 


হাতিয়া, (নোয়াখালী) থেকে ফিরে: বছর তিনেক আগে শেষবার যাওয়া হয়েছিলো হাতিয়ায়। নোয়াখালী জেলার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে লাগোয়া চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ট্রলারে চেপে প্রায় ঘণ্টাখানেক পথ পেরিয়ে নলছিরা ঘাটে ট্রলার থামার পর পড়তে হয়েছিলো চরম বিপত্তিতে।

 

কাদা মাড়িয়ে নৌকার লোকজনের সহযোগিতায় পাড়ে উঠতে হয়েছিলো সেবার। পাড়ে উঠে ডানে-বায়ে যে দিকেই তাকিয়েছিলাম চোখে পড়েছিলো মেঘনার ভাঙন। ক্রমাগত ভাঙনে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছিলো জনপদ। এবার গিয়ে সে দৃশ্য আর চোখে পড়েনি। পাল্টে গেছে সে চিত্র। দেখা যায়নি ভাঙনের চিহ্ন। সুরক্ষিত আছে নদীর পাড়ের জনপদ।

ঘাটে অপেক্ষা করা স্থানীয় সাংবাদিক শামীমুজ্জামান জানালেন, নিজেদের জনপদকে রক্ষা করার এমন উদ্যোগ হাতিয়া দ্বীপবাসী নিজেরাই নিয়েছেন। দ্বীপের মানুষ নিজেরাই টাকা তুলে কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের সুরক্ষার চেষ্টা করে আসছেন।  

ঘাটে দেখা হয় ফাহিম হোসেন নামে এক ইজারাদারের সঙ্গে। তিনি জানালেন ঘাটের পুরো চিত্র পাল্টে গেছে, নৌকা থেকে উঠা নামায় মানুষের আর ভোগান্তি নেই। হাতিয়া এখন ভাঙন থেকে সুরক্ষিত। এ বিষয়ে কথা হয় হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ লিটনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীভাঙনে উপজেলা হাতিয়ার বিস্তৃর্ণ এলাকা হারিয়ে যেতে বসেছে। মেঘনার ভাঙন থেকে নিজেদের রক্ষায় এটি হাতিয়াবাসীর অনন্য উদ্যোগ। শিক্ষক, দোকানদার, কুলি-মজুর থেকে শুরু করে দ্বীপের সব শ্রেণিপেশার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে এ কার্যক্রমে। হাতিয়ার মানুষের প্রাণের দাবি একটাই তা হলো নদী ভাঙন থেকে নিজেদের রক্ষা করা। সরকারের কাছে সেই দাবির কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় দ্বীপবাসী নিজেরাই এ প্রকল্প শুরু করেছে। দ্বীপের মানুষ মনে করে তাদের দাবিতে সরকারও সাড়া দেবে।

‘হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন’ হাতিয়া রক্ষা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে চলেছে। প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস। প্রকল্পের জন্য স্থানীয়রা অর্থ জোগান দিলেও মোহাম্মদ আলী ও আয়েশা ফেরদাউস পরিবারই দিয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।

সংগঠনটির সভাপতি ও হাতিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দ্বীপের সব শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে এ কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে। কাজের বিনিময়ে মানুষদের টাকা দিতে হচ্ছে না।  তিনি বলেন, টার্গেট রয়েছে মোট ৭শ মিটার এলাকাজুড়ে জিও ব্যাগ ফেলে জনপদকে সুরক্ষা করা। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই ২ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ হয়েছে যা দিয়ে ৬শ মিটারের কাজ হয়েছে। আরও ১শ মিটারের মত কাজ বাকি রয়েছে। এ কাজটি সম্পন্ন হলে দ্বীপের চর কিং, চর ঈশ্বর, নলছিরা ও সুখচর ইউনিয়ন ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।  

তিনি আরও বলেন, এ কাজে আর্থিক আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য যৌথ ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন দান-অনুদানের হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রয়েছে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।

নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়ার ভাঙনপ্রবণ এলাকার ২৯৭ মিটার জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছিল। তাতে দেখা যায় ওই এলাকার ভাঙন কিছুটা কমেছে। তাই স্থানীয়রা ঠিক করেছেন, জিও ব্যাগ দিয়েই হাতিয়ার ভাঙন অনেকটা ঠেকানো যাবে। স্থানীয় সাংবাদিক শামীমুজ্জামান বলেন, চলতি বছরের ৩০ মে ‘হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন’র ব্যানারে দ্বীপের নলছিরা ঘাটে এ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী। এরপরে পুরোদমে চলতে থাকে কাজ।  

দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের দিকে না চেয়ে থেকে নিজেরাই নিজেদের সমস্যা দূর করার এমন প্রয়াস ইতিবাচক। এ কাজে দ্বীপের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছে। আমরাও সব কর্মীরা একদিনের বেতন দিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।