ঢাকা: মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’র বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ করা প্রশাসকের সব কার্যক্রমের ওপর আবারও স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বুধবারের শুনানির পর আদালত বলেছেন, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেবেন। তার আগ পর্যন্ত মোবাইল আর্থিক সেবা নগদে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসকের সব কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাবস্থা বলবৎ থাকবে।
এর আগে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের এক আদেশে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নগদে প্রশাসকের সব কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তখনো প্রশাসক এবং তার সহকারীরা নগদে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন যা কোর্টের নির্দেশনার পরিষ্কার বরখেলাপ।
বুধবার হাইকোর্টের এ আদেশের পর নগদ লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডারদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ নওশাদ জমির বলেন, আদালত নগদে প্রশাসকের স্থগিতাবস্থা বলবৎ রেখেছেন। এর ফলে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত প্রশাসক ও তার দল নগদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ধরনের কোনো কার্যক্রম করতে পারবেন না।
হাইকোর্ট একইসঙ্গে এটিও প্রত্যক্ষ করেছেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যখন চূড়ান্ত রায় আসবে তখন এগুলো বাতিল হয়ে যাবে এবং তখনই এ বিষয়ে যথাপোযোক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে অবৈধ ঘোষিত এই প্রশাসকরা যাতে আদালতের রায় মেনে চলে সেদিকে খেয়াল রাখতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নগদ লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডাররা।
এদিন রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে সিনিয়র আইনজীবীরা আবুল কালাম খান দাউদ, জিয়াউর রহমান এবং জামিলুর রহমান প্রমুখ।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বদলে দেওয়ার ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট আগামী এক বছরের জন্য ডিজিটাল লেনদেন সেবা ‘নগদে’ প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যে আইনের ক্ষমতাবলে প্রশাসক নিয়োগ করা হয় বলে তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় তখনো পর্যন্ত সে আইনের গেজেট প্রকাশিত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক করার পাশাপাশি বিভিন্ন পদ মর্যাদার আরও কয়েকজনকে সহকারী প্রশাসক করে নগদে পাঠায় তারা।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির সহযোগিতাদের সমন্বয়ে নতুন করে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এসব প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে নগদের নির্বাহী পরিচালক সাফায়েত আলম হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
১৭ সেপ্টেম্বর রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে ‘নগদ’এর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক নিয়োগ কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবারের শুনানির পর দ্বিতীয় দফা প্রশাসকের কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থার আদেশ দেন হাইকোর্ট।
২০১৯ সালে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে নগদ। গত বছর নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সও পায়। সেই অনুসারে সেবা চালুর দ্বারপ্রান্তে ছিল নগদ লিমিটেড। কিন্তু কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স স্থগিত করে। একইসঙ্গে মোবাইল আর্থিক সেবা হিসেবে নগদের অভ্যন্তরে প্রশাসক ও তার সহযোগিরা অনুসন্ধানের নামে নানা ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
এএটি