ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৭

কর্পোরেট কর্নার

শিল্পপতি স্যামসন এইচ. চৌধুরীর শততম জন্মদিন আজ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৩০, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫
শিল্পপতি স্যামসন এইচ. চৌধুরীর শততম জন্মদিন আজ শিল্পপতি স্যামসন এইচ. চৌধুরী।

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ. চৌধুরীর শততম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর)। ১৯২৫ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের আড়ুয়াকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তিনি ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রয়াত হন। জন্মদিনে তাকে স্মরণে নানা আয়োজন করেছে পরিবার ও স্কয়ার গ্রুপ।

১৯৫৮ সালে তিন সহযাত্রী ডা. কাজী হারুনর রশিদ, ডা. পরিতোষ কুমার সাহা, রাধিকামোহন রায়কে নিয়ে পাবনা শহরের শালগাড়িয়া মৌজায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস নামে ছোট আকারে একটি ওষুধ কারখানা স্থাপন করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। সেখান থেকে ব্যবসা ও ব্যবসার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ হতে হতে বর্তমান আকার নিয়েছে স্কয়ার গ্রুপ। তার রেখে যাওয়া আদর্শ ও মূল্যবোধের পথ ধরে তার উত্তরসূরীরা স্কয়ার পরিবারকে উন্নীত করেছেন ৮১ হাজার সদস্যের পরিবারে।

স্যামসন এইচ চৌধুরীর বাবা ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী ছিলেন একজন মেডিকেল অফিসার, অর্থাৎ ডাক্তার। মায়ের নাম লতিকা চৌধুরী। বাবার চাকরির সুবাদে, আবার কখনো বা উন্নত শিক্ষার জন্য পরিবারের ইচ্ছায় একের পর এক স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু বাবার পেশার সুবাদে শৈশব থেকেই তিনি দীক্ষিত হয়েছেন মানবসেবার মন্ত্রে।  

১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করে তিনি বাবার মতো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা, বিশেষ করে অনুজ চার ভাই ও দুই বোনের লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তা সম্ভব হয়নি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে, যোগ দেন রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভিতে। সেখানেই তার চরিত্রের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্যটি উন্মোচিত হয়। প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি সিগনালিং শাখায় চাকরি না নিয়ে রাডার অপারেটর হওয়ার জন্য চার দিন কারাবরণ করেন, কিন্তু তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে কর্তৃপক্ষ হার মানতে বাধ্য হয়।

যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে তিনি পাবনার ডাক বিভাগে যোগদান করেন, কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী মন সেখানে বাঁধা পড়েনি। ডাক বিভাগের চাকরি ছেড়ে তিনি বাবার পরামর্শে ‘হোসেন ফার্মেসি’র দায়িত্ব নেন। এটি কেবল একটি ওষুধের দোকান ছিল না, এটি ছিল তার উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম সোপান। ১৯৫৬ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতেই একটি ছোট ওষুধ তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। নাম দিলেন ‘ইসনস্’ (Esons)। একমাত্র সহকারী হিসেবে পেলেন তার কর্মজীবনের সহযোদ্ধা, তার স্ত্রী মিসেস অনিতা চৌধুরীকে। ‘ইসনস্’ ছিল তার স্বপ্নের এক ক্ষুদ্র বীজ বপন, যা কঠোর পরিশ্রম ও প্রত্যয় দিয়ে অঙ্কুরিত হয়েছিল ‘স্কয়ার’ নামক বিশাল এক মহীরূহে।  

১৯৫৮ সালে তিনি তার তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্কয়ার’। এই নামের পেছনে ছিল এক গভীর দর্শন। ‘স্কয়ার’র চারটি বাহু যেমন চার বন্ধুকে বোঝাতো, তেমনি এটি ছিল পরিপূর্ণতা ও শুদ্ধতার প্রতীক। তার বিখ্যাত উক্তি ‘সাফল্য অর্জনে কোনো শর্টকাট পথ নেই’-এই মন্ত্রকে তিনি সবসময় পাথেয় করেছেন। প্রথম তিন বছর কোনো লাভ না হলেও তার অবিচল সাধনা স্কয়ারকে নিয়ে যায় সাফল্যের শিখরে। ১৯৮৫ সালে দেশের সব বহুজাতিক কোম্পানিকে পেছনে ফেলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস দেশসেরা হয়ে ওঠে এবং সেই অবস্থান আজও ধরে রেখেছে। দেশের সীমা ছাড়িয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর ওষুধ ছাড়াও স্কয়ারের অন্যান্য পণ্যগুলোও আজ বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের বাইরেও।

ঔষধশিল্পে সাফল্যের পর স্যামসন এইচ. চৌধুরী তার প্রতিষ্ঠানকে আরও প্রসারিত করেন। ১৯৮৮ সালে স্কয়ার টয়লেট্রিজ, ১৯৯৪ সালে স্কয়ার টেক্সটাইলস, ১৯৯৭ সালে মিডিয়াকম লিমিটেড, ১৯৯৮ সালে এগ্রো-কেমিক্যালস ও ভেটেরিনারি প্রোডাক্টস, ২০০০ সালে স্কয়ার স্পিনিং, এবং ২০০১ সালে স্কয়ার নিট ফ্যাব্রিক্স, স্কয়ার ফ্যাশনস, স্কয়ার কনজিউমার প্রোডাক্টস, স্কয়ার ইনফরম্যাটিক্স ও স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেড এবং ২০১১ সালে মাছরাঙা টেলিভিশন যাত্রা শুরু করে। এভাবে একের পর এক নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি দেশের শিল্পখাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন।

একজন সফল শিল্পপতি হয়েও তিনি তার মানবিক মূল্যবোধ থেকে কখনোই দূরে সরে যাননি। সমাজের প্রতিটি স্তরে, বিশেষ করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তিনি মুক্তহস্তে দান করতেন। মানুষের সেবা করাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

স্যামসন এইচ. চৌধুরীর সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো তার ভিশন ও আদর্শকে তার উত্তরসূরীদের মধ্যে প্রবাহিত করতে পারা। তার সন্তানদের নেতৃত্বে স্কয়ার গ্রুপ শুধু ঔষধশিল্পে নিজেদের শীর্ষস্থান ধরে রাখেনি, বরং তার দূরদর্শিতার ধারাবাহিকতায় একের পর এক নতুন খাতে নিজেদের প্রসারিত করেছে।  

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই ক্ষণজন্মা মানুষটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সমাজের সর্বস্তরে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হন। ৭ জানুয়ারি মৃত্যুর দুইদিন পর পাবনায় তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কর্পোরেট কর্নার এর সর্বশেষ